মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
‘কালি’ ছিটোনোর চেষ্টার মুখে সোজা ব্যাটেই খেলছেন তাঁরা।
বুধবার কলকাতাবাসী মুসলিম নাগরিকদের একাংশের তরফে পাঠানো একটি চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শহরে সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনায় রং না-দেখে ‘দোষীদের’ বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এবং কোনও ঘটনাতেই সাম্প্রদায়িক রং না-দেখার অনুরোধও করা হয়েছে। এনআরএস হাসপাতালে হামলা এবং এক মডেলের অ্যাপ-ক্যাব ঘিরে বাইকসওয়ারিদের ‘দাপাদাপি’, দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তেরা ঘটনাচক্রে মুসলিম। এ দেশের সংবিধানে বা বহু নাগরিকের চেতনাতেই ‘অপরাধী’র ধর্ম হয় না। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং নেট-নাগরিকদের একাংশ দু’টি ঘটনাতেই ‘অপরাধী’র ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে জল ঘোলা করতে ব্যস্ত।
‘দু’টি ঘটনার হামলাকারীরা মুসলিম— তাতে আমরা ব্যথিত এবং লজ্জিত’— এ কথা বলে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা হয়েছে, ‘প্রথমত দোষীদের আইনি সাজা দিন। মুসলিমরা জড়িত, এমন সব ঘটনাতেই তেমনটা করুন। মুসলিম বলে তারা যেন কখনওই রেহাই না-পায় (লোকে ইদানীং যা ভাবছে)। তাতে একটা বার্তা যাবে, একটি গোষ্ঠীকে আড়াল করা হচ্ছে না (যা বেশির ভাগ লোকের বিশ্বাস)।’ এ-সবই হাজারো ‘নিঃশব্দ ভুক্তভোগীর’ কথা বলে চিঠিতে দাবি করা হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার মুদার পাথেরিয়ার নাম রয়েছে চিঠিতে। তিনি বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বা প্রশাসনকেই বোঝাতে হবে, মুসলিমদের বিষয়ে কিছু ধারণা ঠিক নয়।’’ আজন্ম কলকাতাবাসী, একটি নির্মাণ সংস্থার পেশাদার তাজ়িন চৌধুরী পোদ্দার মারোয়াড়ি পরিবারে বিয়ে করেছেন। নিজেকে ‘ধর্মনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচয় দিয়েই বললেন, ‘‘এটা ভুলভাল গল্প যে, মুসলিমেরা তোষণ চান। প্রশাসনকে এই ধারণা ভাঙতে হবে।’’
দীর্ঘদিন কলকাতাবাসী, ওয়াজ়িদ আলি শাহের বাড়ির ছেলে শাহেনশাহ মির্জা আবার মনে করেন, মুসলিমদের একাংশের মধ্যে কয়েকটি আইনি দিক নিয়ে ভুল ধারণা আছে। যেমন অনেকে টুপি পরে হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইকে বসেন। খামোখা তাঁদের জীবন বিপন্ন হয়। গোষ্ঠীর বিষয়েও ভুল ধারণা তৈরি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকটি এলাকায় ইমামদের মাধ্যমেও আমরা এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি, প্রশাসনকেও বলব, অপরাধকে অপরাধ বলেই দেখা হোক।’’ কিছু এলাকায় আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও যুবকদের অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে বলে মনে করেন মুদার। মমতাকে পাঠানো চিঠিতে মুসলিম তরুণদের মধ্যে লিঙ্গসংবেদনশীলতা বা আইনি সচেতনতা বাড়ানোর আর্জি জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা সেই চিঠি।
চিঠিটিতে ৫০ জন নাগরিকের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে না-থাকলেও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মইদুল ইসলাম মুসলিম সমাজের এই ‘স্বর’কে স্বাগত জানাচ্ছেন।
কিন্তু এই চিঠি লেখার পরিস্থিতি কি কাম্য ছিল? সাহিত্যিক-অধ্যাপক নবনীতা দেবসেন যেমন বললেন, ‘‘মুসলিমদের এত জনকে যে এমন চিঠি লিখতে হচ্ছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে লজ্জাই করছে। কই, হিন্দুদের তো এমন চিঠি লিখতে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy