রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।—ফাইল চিত্র।
হয়েও হল না! অতিমারির মোকাবিলায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য বেসরকারি চিকিৎসক সংগঠনের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। সেই বার্তায় সাড়া দিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন এমন সতেরো জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নামের তালিকা স্বাস্থ্য ভবনের কাছে জমা দিয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম (ডব্লিউবিডিএফ)। সরকারি পরিকাঠামোয় কর্মপদ্ধতির রূপরেখা নির্ধারণে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবনে তাঁদের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের করোনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্যের ফোন পাওয়ার পরই চিকিৎসক সংগঠনটি মত বদল করে বলে খবর।
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, প্রতি দিন যেখানে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রাজ্যবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে তখন এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, এদিন চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা হল ২৪৩৬। করোনা পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। তার মধ্যে শুধু কলকাতার বাসিন্দা রয়েছেন ১৯ জন। কলকাতায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা কার্যত আটশোর (৭৯৫) ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছে হাওড়া (৩০৩)। উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪৫ এবং ১৭৩ জন।
এ দিনের ঘটনার দু’রকম ব্যাখ্যা মিলেছে। সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে এখনও চিকিৎসকদের একাংশ দ্বিধা ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। এ দিনের বৈঠকে চিকিৎসকদের যোগ না-দেওয়ার ঘটনাকে ‘পশ্চাদপ্রসরণ’ হিসাবে দেখছেন সরকারি চিকিৎসকদের ওই অংশ।
যদিও ডব্লিউবিডিএফের বক্তব্য, ঘটনার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রেজাউল করিম জানান, রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তা সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলিতে শয্যা খালি এবং রোগী ভর্তির প্রক্রিয়াকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায়, তা নিয়ে তাঁদের পরামর্শ চেয়েছিলেন।
পাশাপাশি, সরকারি কোভিড হাসপাতালের অভ্যন্তরে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য ‘বহিরাগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ হিসাবে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে রাজি হয়েও এক ফোনে বেঁকে বসে ডব্লিউবিডিএফ।
ঘটনা সম্পর্কে অবহিত এক সরকারি চিকিৎসক বলেন, ‘‘যিনি ফোন করেছিলেন তিনি তো অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি। তাছাড়া তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই আপ্যায়ণে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল, এখন কি তা বিচার করার সময়?’’
চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ‘‘কোনও তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি ছাড়া সরকার সরাসরি সাহায্য নিতে চাইলে আমরা সর্বতোভাবে আছি। সরকারের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে তার অস্তিত্ব কোনও দিনই আমরা স্বীকার করিনি। কারণ ওই কমিটির কেউ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নন।’’ এ রাজ্যে সরকারের কাছ থেকে চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া আদায়ে সাতটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ রয়েছে। ডব্লিউবিডিএফের পাশাপাশি সেই মঞ্চের অন্যতম সদস্য হল অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস (এএইচএসডি)। তাঁরাও কি ডাক পেয়েছিলেন? এএইচএসডি’র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘না, ডাক পাইনি। ডব্লিউবিডিএফকে যে ডাকা হয়েছে তা-ও জানা নেই।’’ হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে হীরালাল কোনার বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ দল চিকিৎসক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলেই তৈরি করা উচিত। কিন্তু ডব্লিউবিডিএফের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তা তো জানি না?’’ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের সদস্যেরা মূলত সরকারি চিকিৎসক। তাই বোধহয় ডাকেনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy