ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভায় ধাক্কার পরে জনসংযোগে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। গাঁ-গঞ্জে পৌঁছে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ জানছেন নেতা-মন্ত্রীরা। কর্মীদের বাড়িতে রাতও কাটাচ্ছেন।
জন-মন বুঝতে এলাকায় ঘুরছেন জঙ্গলমহলের জেলাশাসকেরাও। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার গত জুন থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে মানুষের কথা শুনছেন। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানিও এ বার শুরু করলেন ‘আপনার সাথে প্রশাসন’ নামে এই কর্মসূচি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় লালগড়ের ধরমপুর পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম ভুলাগেড়ায় যান আয়েষা। গ্রামবাসীর অভাব-অভিযোগ শোনেন। রাতে তাঁদের সঙ্গে খাওয়া সেরে গ্রামের স্কুলে রাতও কাটান। জেলা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরাও ছিলেন।
পুরনো মাওবাদী ঘাঁটি ভুলাগেড়ায় একসময় কিষেণজি থাকতেন। সেখানে রাত কাটিয়ে জেলাশাসক বলছেন, ‘‘মানুষ সরকারি পরিষেবা কতটা, কী পাচ্ছেন তা দেখতেই এই উদ্যোগ। সরকারি পরিষেবা নিয়ে সচেতনও করা হচ্ছে। এতে ভাল ভাবে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া যাবে।’’
মাওবাদী এলাকায় প্রশাসনের এমন জনসংযোগ নতুন নয়। বাম আমলে ২০০৭ সালে ‘আপনার দুয়ারে প্রশাসন’ শুরু করেছিলেন ঝাড়গ্রামের তৎকালীন মহকুমাশাসক আর এ ইজরায়েল। ২০১৩ সালে বর্ধমানে ‘দুয়ারে প্রশাসন’ চালু করেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। তবে লোকসভায় তৃণমূলের ভরাডুবির পরে বিশেষত জঙ্গলমহলে প্রশাসনের এই উদ্যোগের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
লোকসভায় জঙ্গলমহল তৃণমূলকে শূন্য হাতে ফেরানোর পরে উন্নয়নে খামতি আর দুর্নীতি-দলবাজির ব্যাখ্যাই সামনে আসে। ‘দিদিকে বলো’য় গ্রামে গিয়ে তৃণমূল নেতাদেরও সেই নালিশই শুনতে হচ্ছে। গত মাসে ডেবরার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বার্তা দেন, মানুষের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। প্রশাসনকে আরও বেশি করে জনসংযোগ
করতে হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুলাগেড়া প্রাথমিক স্কুল চত্বরে জনতার দরবারে জেলাশাসককে কেউ জানান, একশো দিনের কাজ করেও মজুরি মেলেনি। কারও নালিশ, গ্রামে রাস্তা নেই। ভাতা, বাড়ি, শৌচাগারের দাবিও জানান অনেকে। শনিবার সকালে ফেরার পথে ধরমপুর পঞ্চায়েতের প্রধানকে জেলাশাসক নির্দেশ দেন, সরকারি পরিষেবার বিনিময়ে কাউকে টাকা দিতে হয় না এমন বার্তা দেওয়া বোর্ড পঞ্চায়েত অফিসে টাঙাতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কি গ্রামে ছোটা? আয়েষার জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কাছে গিয়ে সমস্যা জেনে
কাজ করতে বলেছেন। আমরা নিজেদের মতো করে সেটা করছি।’’ পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল তো স্পষ্ট মানছেন, ‘‘১০ জুন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, গ্রামে গিয়ে মানুষের সমস্যা বুঝতে।’’
শাসক দল ও প্রশাসনের এই জনসংযোগ যে সমান্তরাল, যা কার্যত মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভানেত্রী বিরবাহা সরেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে, আমরা আমাদের।’’ বিজেপির ড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর কটাক্ষ, ‘‘দিদিকে বলোয় মানুষ সাড়া দিচ্ছেন না। তাই প্রশাসনকে মাঠে নামানো হয়েছে।’’ পুরুলিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর মতে, ‘‘আসল কাজ হলে ভাল। না হলে পুরোটাই ‘দিদিকে বলো’র মতো নাটক হয়ে যাবে।’’
সহ-প্রতিবেদন: প্রশান্ত পাল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy