চাকরি গেলেও আদালতের নির্দেশে পুরনো সরকারি চাকরিতে ফেরার উপায় রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে সে আবেদন জমা দিতে গিয়ে, এক-এক জেলায় এক-এক রকম অভিজ্ঞতা চাকরিহারাদের। কোথাও তাঁদের আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়নি। কোথাও জমা নিয়ে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে রাজ্য স্তরের নির্দেশ এলে, তাঁদের জানানো হবে। একই রায়ের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলায় নানা রকম বলা হচ্ছে কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের অন্তত ৬৫ জন শিক্ষক পুরনো চাকরি ফেরত পাওয়ার আশায় লিখিত আবেদনপত্র নিয়ে ঘুরছেন। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের (ডিপিএসসি) চেয়ারম্যান ওই আবেদন নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিনিধি অমিত মণ্ডল বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যে অন্তত গোটা চারেক জেলায় ডিপিএসসি কর্তৃপক্ষ ওই আবেদন জমা নিয়েছেন। কলকাতায় বিকাশ ভবনেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওই আবেদনপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে। অথচ, দক্ষিণ দিনাজপুর ডিপিএসসিতে ঘুরতে হচ্ছে।’’ দক্ষিণ দিনাজপুর ডিপিএসসির চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদার বক্তব্য, ‘‘রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে ওই বিষয়ে এখনও নির্দেশ আসেনি।’’ আবেদন জমা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আলিপুরদুয়ার, বীরভূমেও। বীরভূম ডিপিএসসির চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক বলছেন, ‘‘যতক্ষণ না সরকারি নির্দেশ পাচ্ছি, কী করে আবেদন গ্রহণ করব? বেশ কয়েক জন খোঁজ নিতে এসেছিলেন। তাঁদের সে কথাই বলেছি।’’
তবে সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার ১২ জন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত ভাবে পুরনো কর্মস্থলে (আগের প্রাথমিক স্কুলে) ফিরতে চেয়ে ঝাড়গ্রাম ডিপিএসসিতে আবেদন জমা দিয়েছেন। তাঁদের ‘রিসিভড কপি’ দেওয়া হয়েছে। ওই ডিপিএসসির চেয়ারম্যান জয়দীপ হোতা বলেন, ‘‘ওঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।’’ হাওড়ার ৬০ জন প্রাথমিক শিক্ষক ২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেল অনুযায়ী, হাইস্কুলের শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে পঁচিশ জন পুরনো চাকরিতে ফিরতে চেয়ে আবেদন করেছেন এবং তা জমা নেওয়া হয়েছে বলে ডিপিএসসির চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ জানিয়েছেন। নদিয়া, পুরুলিয়া, হুগলি, মালদহও আবেদন জমা নিয়েছে।
আবার দুই বর্ধমান, কোচবিহার, পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রাথমিকের পুরনো চাকরিতে ফেরার আবেদনপত্র এখনও জমা দেননি কেউ। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কয়েক জন জানান, তাঁরা প্যানেল বাতিলের বিষয়টি কোন দিকে গড়ায়, সে দিকে নজর রাখছেন। পরে, পরিস্থিতি বুঝে আবেদন করবেন।
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই চাকরিপ্রার্থীদের তাঁদের সমস্ত তথ্য দিয়ে জেলার ডিপিএসসিতে এবং স্কুল শিক্ষা কমিশনারের কাছে আগের প্রাথমিকের নিয়োগপত্র-সহ সব নথি দিয়ে আবেদন করতে হবে। তা হলে, অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)