Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সভা কেন, হুমকি বহু আশাকর্মীকে

কাজের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং ক্ষোভ জানিয়ে সমাবেশ করায় তাঁদের এই ধরনের লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার আশাকর্মীদের অভিযোগ।

জমায়েত: রানি রাসমণি রোডে আশাকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র ।

জমায়েত: রানি রাসমণি রোডে আশাকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৪
Share: Save:

কেন গিয়েছিলেন সমাবেশে? কারা সেখানে যেতে আপনাদের উস্কানি দিয়েছিল? ‘ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ থেকে বলছি’, ‘ডিআইজি বলছি’, ‘আইবি অফিসার বলছি’— জবাব দিন।

কাজের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং ক্ষোভ জানিয়ে সমাবেশ করায় তাঁদের এই ধরনের লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার আশাকর্মীদের অভিযোগ।

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আশাকর্মীদের হাতে হাতে বাঁশি ধরিয়েছে সরকার! সেই বাঁশি হাতে কাকভোরে মাঠেঘাটে ছুটতে হচ্ছে আশাদিদিদের। পুরুষ বা মহিলাদের কাউকে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে দেখলেই সেই বাঁশি বাজিয়ে তাঁদের তাড়না করতে হচ্ছে! সেই তাড়া খেয়েও যদি ‘অপরাধীরা’ নিবৃত্ত না-হন, তা হলে মোবাইলে তাঁদের ‘কুকর্ম’-এর ছবি তুলে জমা দিতে হচ্ছে স্থানীয় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অধিকাংশ আশাকর্মী। প্রশ্ন তুলেছেন, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে যাওয়া লোকেদের বাঁশি বাজিয়ে তাড়িয়ে বেড়ানো আর তাঁদের ছবি তোলা কি আশাকর্মীদের কাজ? এই ধরনের বেশ কিছু বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দিতে গত ১৮ ডিসেম্বর কলকাতার রানি রাসমণি রোডে বিক্ষোভ-সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন হাজার তিরিশ আশাকর্মী। রাজ্য জুড়ে আশাকর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।

এ ভাবে বিক্ষোভ দেখানোয় স্বাস্থ্যকর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তা ও পুলিশ জেলায় জেলায় আশাকর্মীদের হেনস্থা করছেন এবং ভয় দেখাচ্ছেন বলে আশাকর্মী সংগঠনের অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরে মৌখিক ও লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছে তারা। আশাকর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা আর কখনও এই ধরনের সমাবেশে যোগ দেবেন না বলে লিখিত মুচলেকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিএএফ, ডিএএফ বা অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ (এএনএম)-রা তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করছেন। বলছেন, উপরমহলের নির্দেশেই মুচলেকা আদায় করা হচ্ছে। মুচলেকা না-দিলে কাজের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার, এমনকী ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

‘‘কোথাও রাজ্য গোয়েন্দা শাখা, কোথাও বা জেলাশাসকের দফতর আবার কোথাও জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তার নাম করে মেয়েদের কাছে ফোন আসছে। তাঁদের শাসানো হচ্ছে। থানার লোক মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে জানতে চাইছেন, তাঁরা কাদের কথায় সভায় গিয়েছিলেন,’’ বলেন পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন।

বীরভূমের অনেক আশাকর্মী জানান, ইলমবাজার এলাকায় থানা থেকে পুলিশ এসে অনেককে হুমকি দিয়েছে। অনেককে ফোন করে বলা হয়েছে, ‘ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ থেকে বলছি। সমাবেশে কেন গিয়েছিলেন?’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার আশাকর্মী সংগঠনের অভিযোগ, ‘ডিআইজি বলছি’ বা ‘আইবি অফিসার বলছি’ বলে জানিয়ে তাদের অনেক সদস্যকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এই ধরনের ঘটনা যে ঘটছে, নবান্নের শীর্ষ মহলের তরফে প্রকারান্তরে সেটা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ওই মহল জানাচ্ছে, যে-কোনও বড় বিক্ষোভ-সমাবেশের পরেই যোগদানকারীদের নামধাম এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি সিভিক ভলান্টিয়ার এবং প্যারাটিচারদের ধর্নার পরেও তা করা হয়েছিল। ফলে আশাকর্মীদের ক্ষেত্রে নতুন কিছু হচ্ছে না। ‘‘প্রশাসন যা ঠিক মনে করেছে তা করেছে,’’ সাফ বলে দিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

কলকাতায় বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর ও উত্তর দিনাজপুরের আশাকর্মীদের শো-কজ করা হয়েছিল। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের মিশন ডিরেক্টর গুলাম আলি আনসারি সব জেলার

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)-কে চিঠি দিয়েছেন। তাতে সমাবেশে যোগ দেওয়া আশাকর্মীদের নাম, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম, ব্লকের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই সমাবেশে কর্মীরা চলে যাওয়ায় কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে বলে জেলা আশা ফেলিসিটেটর (ডিএএফ) এবং ব্লক আশা ফেলিসিটেটর (বিএএফ)-রা কেন আগাম তথ্য পেশ করেননি, তা জানতে চেয়ে তাঁদের শো-কজ করতে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মিশন-প্রধান আনসারি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE