সুখরাম চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
সরকারি চাকরি নেই। ইঞ্জিনিয়ার সুখরাম তাই এখন মাঝি। মানসাই নদীতে নৌকায় যাত্রী পারাপার করাতেই এখন দিন কেটে যায় সুখরাম চৌধুরীর।
এই কাজে তাঁর দুঃখ নেই, তবে আক্ষেপ রয়েছে। জন্মের পর থেকেই মানসাইয়ের সঙ্গে নাড়ির টান তাঁর। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করার পরেও মানসাইয়ের প্রতি তাঁর ভালবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি সদাহাস্য সুখরামের। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন মানসাইয়ের বুকে খেয়া পারাপারে ব্যস্ত তিনি। সুখরামের ঠাকুরদা বানোয়ারি চৌধুরী উত্তরপ্রদেশের চাহানিয়া জেলা থেকে কাজের সন্ধানে মাথাভাঙায় আসেন। মাথাভাঙা ১ ব্লকের জোড়পাটকি পঞ্চায়েতের ধরলা মানসাইয়ের মিলনস্থলে পানাগুড়ি নদীর পাড়ে বহু বছর আগে বসবাস শুরু করেন। তার পরে খেয়াপার করতে করতে কখন যে মানসাইয়ের সাথে জড়িয়ে যায় জীবন, আর ফিরে যাননি।
পড়া শেষ করে চাকরির মন্দা বাজারে বাপ-ঠাকুরদার পেশা আঁকড়ে ধরে সুখরাম এখন হ্যাংগারঘাটে খেয়া বয়ে চলেন। সুখরামের বাবা গোপাল চোধুরী বলেন, ‘‘অনেক আশা নিয়ে ছেলেকে ডিপ্লোমা করিয়েছি। কিন্তু, ছেলে পড়াশোনা করে বড় কিছু হবে, এই স্বপ্ন ছিল।’’ সুখরামের কথায়, ‘‘রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাবা ঘাটে নৌকা চালিয়েছেন। আমাদের পড়িয়েছেন, খাইয়েছেন। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। আর এক বোন সংস্কৃত অনার্স নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। আমার আর বোনের খরচ চালাতে ভাই পড়া ছেড়েছে সংসারের হাল ধরতে। এই বানোয়ারি ঘাটই তো আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছে। বাবার বয়স হয়েছে। বাবাকে ছুটি দিতে তাই বৈঠা হাতে তুলে নিয়েছি।’’ জানালেন, দু’বছর আগেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পর থেকে ঘরেই বসে। চাকরির চেষ্টা করেও মেলেনি। তাই অবশেষে বাপ-ঠাকুরদার কাজই বেছে নেন।
নৌকা চালাতে চালাতেই সুখরাম বলছিলেন জীবনের গল্প। নৌকা পাড়ে ভিড়তেই যাত্রীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। পাড়ে অপেক্ষা করে থাকা যাত্রীদের নিয়ে ফের ওপারে ফিরে যাওয়া। হাসিমুখে বৈঠা ধরে নেন সুখরাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy