ভার্চুয়াল বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছেন দিলীপ। ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরে রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ আর রাজনীতির মধ্যেই নেই। পদাধিকারীদের কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যে দলবিরোধী বক্তব্য পেশ করে চলছেন। আরেকটা বড় অংশ ঘরে বসে রয়েছেন। নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠকেও কারও কারও দেখা পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে নেতাদের উপরে বেজায় ক্ষুব্ধ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বৈঠকে এ নিয়ে দলীয় নেতাদের উপরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত মঙ্গলবার ধমকের সুরে জেলা সফরের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই বৈঠকে হাজির এক রাজ্য বিজেপি নেতার জানিয়েছেন যে, দিলীপ সরাসরি বলেছেন, ‘‘ঘরে বসে চা-মুড়ি খেতে খেতে রাজনীতি করলে নেতা হওয়া যায় না! পথে নামতে হয়!’’
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই দিলীপ আশাহত রাজ্য নেতাদের একটি কথা নিয়মিত বলে চলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "আমাদের লক্ষ্য বড় ছিল। তবে স্বপ্নের ২০০ ছুঁতে না পারলেও রাজ্য বিধানসভায় একমাত্র বিরোধীর মর্যাদা পেয়েছে দল। কয়েক বছর আগেও রাজ্যে বিজেপি সাইনবোর্ড সর্বস্ব থাকলেও এখন ১৮ লোকসভা আর ৭৭ বিধানসভা আসনে দল জয়ী। এখন দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কর্মীদের কাজের মধ্যে রাখতে হবে। তাঁদের পাশে থাকতে হবে।''
দিলীপ এত বলার পরেও দলের একটি অংশের নেতা জেলা সফর করছেন না বলে অভিযোগ বিজেপি শিবিরেই। সেটা লক্ষ্য করে সম্প্রতি যাঁরা কাজ করছেন না, তাঁদের কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ভোটের পর থেকে কর্মীরা আক্রান্ত এবং ঘরছাড়া বলে অভিযোগ তুলে চলেছে বিজেপি। কর্মীদের পাশে নেতারা নেই বলে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগও এসেছে। নেতাদের অনেকেরই বক্তব্য, রাজ্যে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতির জন্যই অনেক জায়গায় যাওয়া যায়নি। তবে এখন বিধিনিষেধ খানিকটা শিথিল হওয়ার পরেও যাঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন দিলীপ। এর পর কিছুটা কাজ হয়েছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির।
কার্যত লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই দিলীপ নিজে হুগলি, হাওড়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা সফর করেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরে সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলায় গিয়েছিলেন। সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় নিজের লোকসভা এলাকা হুগলিতে কাজ করেছেন। কিন্তু সার্বিক ভাবে কাজের মধ্যে থাকার ছবিটা ‘সন্তোষজনক’ নয় বলে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দিলীপ। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের উদাহরণ দিয়ে দিলীপ বলেছেন, ‘‘আমি এত জায়গায় ঘুরতে পারলে বাকিরা কেন পারলেন না? সকলেই তো একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে! আমার জন্য তো আলাদা করে বিধিনিষেধ শিথিল করেনি রাজ্য।’’দলের পদাধিকারীদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক ছাড়াও সম্প্রতি রাজ্য সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে কলকাতার হেস্টিংসে বিজেপি কার্যালয়ে বৈঠক করে একই কথা বলেছেন রাজ্য সভাপতি।
দিলীপের ধমকে যে কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন। ওই জোনের দায়িত্ব তাঁরই। নিজের বিধানসভা এলাকা আসানসোল দক্ষিণের বাইরে সে ভাবে গা না-ঘামানো রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। বাঁকুড়ার সাংসদ তথা দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার নিজের এলাকায় কর্মীদের পাশে থেকে কাজ শুরু করেছেন। রাঢ়বঙ্গ জোনের পর্যবেক্ষক তথা সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিয়মিত সফর শুরু করেছেন। সম্প্রতি তিনি বর্ধমান ও বিষ্ণুপুরে গিয়েছিলেন।
রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপ শিবিরের সদস্য হিসেবে পরিচিত এক নেতা বলেছেন, ‘‘দিলীপদা ছাড়া আমরা কয়েকজন নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছি। কয়েকজন খালি মুখেই বড় বড় কথা বলছেন! কোনও কাজ করছেন না। বাড়ির কাছে কর্মীরা আক্রান্ত হলেও নিজেরা না গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছেন! এঁদেরই নেতা হওয়ার যোগ্যতা নেই বলতে চেয়েছেন দিলীপদা। কারণ, দিলীপদা বিজেপি-তে যোগদানের পর থেকে একটি দিনও ঘরে বসে থাকেননি। রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরেও তাই। একান্ত জরুরি কিছু না থাকলে কলকাতায় থাকতেও পছন্দ করেন না। আর তাতেই এখনও পর্যন্ত দল যে সাফল্য পেয়েছে, সেটা সম্ভব হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy