সিবিআই কার, তা নিয়ে তাঁর মাথা ব্যাথা নেই জানিয়ে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
‘সেটিং’ তত্ত্বে অনড় দিলীপ ঘোষ। রবিবার সন্ধ্যায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বলেছিলেন, সিবিআইয়ের সঙ্গে এ রাজ্যে শাসকদলের ‘সেটিং’ হয়েছে বুঝেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ইডিকে তদন্ত করতে পাঠিয়েছে বাংলায়। সোমবার বললেন, ‘‘সিবিআই কার, তাতে আমার কিছু এসে যায় না। সিবিআই দেশের একটা সংস্থা। তাদের বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ন্যায় পাইনি। ইডি প্রমাণ করেছে তারাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত এজেন্সি।’’
রবিবার দিলীপের মন্তব্যের সমালোচনায় যেমন তৃণমূল সরব হয়েছিল, তেমনই প্রকাশ্যে না হলেও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। কারণ, প্রথমত দিলীপ যে সংস্থার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন, সেই সিবিআই কেন্দ্রীয় সংস্থা। তারা বাংলায় একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নেমেছে। দ্বিতীয়ত, এই কেন্দ্রীয় সংস্থার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে। কিন্তু সোমবার সকালে আরও একবার নিজের মন্তব্যে অনড় থেকে বিজেপি নেতা দিলীপ বুঝিয়ে দিলেন, তিনি এই সব ‘সূক্ষ্ম হিসেবনিকেশ’-এর ধার ধারেন না। অর্থাৎ দিলীপ বোঝাতে চেয়েছেন, মোদীর অধীনে থাকা সিবিআইয়ের উপর ‘ভরসা নেই’ তাঁর, বরং তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ইডিতেই বেশি ‘আস্থা রাখেন’।
সোমবার সকালে নিউটাউনের ইকোপার্কের কাছে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন দিলীপ। প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে অতীতেও বহু বার বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি। সোমবারও তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। যেহেতু রবিবারই সিবিআই-ইডি নিয়ে তাঁর মন্তব্য নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল, সে ব্যাপারে তাঁর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। জবাবে দিলীপ এক নিশ্বাসে বলে যান, ‘‘আমি আমার দুঃখের কথা বলেছি। নির্বাচনের পর আমার ৬০ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সিবিআইকে তার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল কোর্ট। ওরা কত জনকে সাজা দিয়েছে? এফআইআরই করতে পারেনি! আমরা তো সিবিআইকেই বিশ্বাস করেছিলাম। ওরা ন্যায় দিতে পারেনি।’’
রবিবারই সিবিআইয়ের থেকে ইডিকে ‘বেশি বিশ্বস্ত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে সিবিআইয়ের সেটিং হয়ে গিয়েছে। সিবিআইয়ের কোনও কোনও আধিকারিক বিক্রি হয়ে যায়। কেউ লাখে, কেউ কোটি কোটিতে। সেটা বুঝতে পেরেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। ফলে যাঁরা সেটিং করেছে, তাঁরা এখন বলছে ইডি কেন? কারণ এই কুকুরটা পোষ মানবে না, কামড়াবে।’’ দিলীপের ওই মন্তব্য প্রসঙ্গে সরব হয়েছিল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলে, ‘‘উনি কি বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই আঙুল তুললেন? সিবিআই রয়েছে কেন্দ্রের অধীনে। সেই সিবিআই নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলে কি দেশের অন্যতম প্রধান তদন্তকারী সংস্থা সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি করে দিচ্ছেন না দিলীপ?’’
সোমবার দিলীপ পাল্টা বললেন, ‘‘সিবিআইয়ের কাছে আমরা ন্যায় আশা করি। কোর্ট তাদের দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু ন্যায় পাওয়া যায়নি। আমি সেই প্রসঙ্গেই বলেছি। কিন্তু দেখলাম অনেক নেতার তাতে কষ্ট হয়েছে। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, কেন কুকুর বলেছি? কুকুর হচ্ছে সবচেয়ে বিশ্বস্ত। কিন্তু আমার ডাক্তারবাবু ভয় পেয়েছেন। হয়তো ভাবছেন, সেই কুকুর যদি কখনও তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যায়! সেই ভয়ে জানতে চাইছেন, কুকুর কেন বলছি। এটা একটা এজেন্সি। আর সবচেয়ে বিশ্বস্ত এজেন্সি হচ্ছে ইডি। সেটা ওরা প্রমাণ করেছে। তার ওপর ভরসা আছে আমাদের। সেই এজেন্সিকে ওরা ভয় পাচ্ছে।’’
যদিও ‘আমার ডাক্তারবাবু’ বলতে দিলীপ কাকে বুঝিয়েছেন, ‘ওরা ভয় পাচ্ছে’ বলতেই বা কাকে ইঙ্গিত করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে যেটা তাৎপর্যপূর্ণ, তা হল বিরোধীরা চোখে আঙুল দিয়ে তাঁর মন্তব্যের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়ার পরও দিলীপ প্রকাশ্যে মোদীর সিবিআইয়ের বদলে নির্মলার ইডিতেই ভরসা রাখার কথা জানালেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy