ফাইল চিত্র
কয়েক দিন রাজ্যে ক্ষমতার বদলের ডাকের সঙ্গে ‘বদলা’র হুঁশিয়ারি দিয়ে দলেই বড় অংশের সমর্থন পাননি। তবু ‘হিংসা’র তত্ত্বেই অনড় দিলীপ ঘোষ। নিজের যুক্তির সমর্থনে এ বার তিনি টেনে আনলেন মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকার কথাও!
মেদিনীপুরে এক বিজেপি কর্মীর খুনের ঘটনার পরে ‘বদলের সঙ্গে বদলা’ নেওয়ার কথা বলেছিলেন দিলীপবাবু। পশ্চিম মেদিনীপুরেরই দাঁতনে এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে শাসক দল ও প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে বিজেপির, শনিবার পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর হয়েছে। তার পরেই রবিবার ইকো পার্কে বিশ্ব যোগ দিবসের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে দিলীপবাবু বলেছেন, ‘‘হিংসা ছাড়া পৃথিবীতে কোনও দিন কোনও সমাধান হয়নি। হিংসার পাল্টা হিসেবে কেউ যদি মন্ত্র জপ করে, তা হলে লোকে তাকে নির্বোধ ও কাপুরুষ ভাববে! যে যে ভাষা বোঝে, তাকে সে ভাষায় জবাব দেওয়া উচিত!’’ লাদাখ সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির রাজ্য সভাপতির সংযোজন, ‘‘আজ যদি হিন্দি-চিনি ভাই-ভাই বলি, তা হলে ওরা কি তা শুনবে? নাকি আমাদের ভারতমাতার আরও কিছুটা জায়গা ছিনিয়ে নেবে?’’
হিংসার পথে সমাধানের যুক্তি দিতে গিয়ে এ দিন দিলীপবাবুর আরও মন্তব্য, ‘‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি যুদ্ধ করে ভুল করেছিলেন? তাঁর কি উচিত ছিল, প্যান্ডেল খাটিয়ে রামকথা বা কীর্তন শোনানো? আসলে যারা কাপুরুষ, তারাই ক্ষমার কথা বলে!’’
দিলীপবাবুর উপুর্যপুরি এমন মন্তব্যের জেরে বিজেপিকে সরাসরি ‘সন্ত্রাসবাদী’ দল আখ্যা দিয়েছে তৃণমূল। দলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘এ তো পুরোপুরি সন্ত্রাসের ভাষা! তালিবান, জয়েশ-ই-মহম্মদ বা লস্কর-ই-তৈবা এই ভাষায় কথা বলে! বাংলার মানুষকে ভেবে দেখতে হবে, কারা এই রাজ্য দখল করতে চাইছে! বর্গীদের হানা থেকে এই রাজ্যকে বাঁচাতে হবে আমাদের।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘হিংসার কথা ছাড়া ওঁদের আর কী বলার আছে? অন্য কিছু দিলীপবাবুদের কাছে প্রত্যাশা করা যায়? শ্রীকৃষ্ণের কথা বলে তিনি নিজের অপদার্থতা আড়াল করতে চাইলে সেটা হাস্যকর।’’ সুজনবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল ‘বদলা নয়, বদল চাই’ বলে ক্ষমতায় আসার পরেও একটা বাহিনী বদলা নিয়েছিল, সেই বাহিনীই এখন বিজেপিতে গিয়ে ভিড়ছে।’’
এর আগে তাঁর কুকথা নিয়ে বিতর্ক হলেও দিলীপবাবু তাঁর মতেই অনড় ছিলেন। বদলা-মন্তব্যে দলের অন্দরে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও তিনি যে পথ বদলাতে রাজি নন, দিলীপবাবুর এ দিনের কথায় ফের তা পরিষ্কার বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। অমিত শাহেরা বারবার ‘হিংসামুক্ত বাংলা’ গড়ার ডাক দিচ্ছেন। দু’দিন আগেই দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেছেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল ‘বদলা নয়, বদল চাই’ স্লোগান দিয়ে। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ ওই স্লোগানে আস্থা রেখে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা শান্তি চান। বিজেপিও গোটা দেশের শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন ছাড়া অন্য কিছু চায় না।’’ সরাসরি মন্তব্য না করেও মুকুল রায় বলেছেন, ‘‘বিজেপি হিংসায় বিশ্বাস করে না।’’ রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তেরও মতে, ‘‘বিজেপির পথ শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ প্রায় ৫০ বছর ধরে হিংসার রাজনীতি দেখে দেখে ক্লান্ত ও বিরক্ত। বিজেপি ক্ষমতায় এসে এই হিংসার সংস্কৃতির অবসান ঘটাবে।’’
দিলীপবাবু অবশ্য মনে করছেন, ক্ষমার কথা বলে কাপুরুষেরা!
আরও পড়ুন: স্থিতিশীল অশোক, আক্রান্ত মুকুলও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy