Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Dilip Ghosh

অমর্ত্য সম্পর্কে কুমন্তব্য, নিন্দায় বিদ্ধ দিলীপ

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং ভারতরত্ন অমর্ত্যবাবুর প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস— সব পক্ষই।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩৫
Share: Save:

অমর্ত্য সেনকে অপমানের মাত্রা চড়াল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বুধবার প্রশ্ন তোলেন, ‘‘জমিচোরকে কি নোবেল দেওয়া হয়েছে?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘দেশ ওঁকে (অমর্ত্যবাবু) অনেক কিছু দিয়েছে। উনি দেশকে কী দিয়েছেন, তা নিয়ে রিসার্চ করতে হবে।’’

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং ভারতরত্ন অমর্ত্যবাবুর প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস— সব পক্ষই। তৃণমূলের তরফে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘দিলীপবাবুরা যখন অমর্ত্য সেনকে জমিচোর বলতে পেরেছেন, তখন এর পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এমন বলতে ওঁদের আটকাবে না। এঁদের হাতে বাংলার সম্মান কেমন রক্ষিত হবে, তা মানুষ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাঁরা অমর্ত্য সেনের নখেরও যোগ্য নন, তাঁরা তাঁকে নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কাদের প্রশ্রয়ে দিলীপ ঘোষ এ সব করছেন, জানি না। কিন্তু এতে বাংলার মানুষের চেতনা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে ওঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ধরা পড়ে যাচ্ছে।’’ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেনের মতো বিদগ্ধ মানুষ জমি চুরি করতে পারেন, এটা একমাত্র দিলীপ ঘোষেরাই কল্পনা করতে পারেন। কিছু না জেনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি যে মন্তব্য করেছেন, সেটা শুধু অশোভন হয়েছে, তা-ই নয়, কোনও খোঁজখবর না নিয়ে এমন মন্তব্য কারও সম্পর্কেই করা অন্যায়। জমি নিয়ে বিতর্ক থাকলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উচিত অমর্ত্যবাবুর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করা। এটা নিয়ে বাইরে এত হইচই কীসের?’’

অমর্ত্যবাবুকে আক্রমণ করায় বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন সমাজকর্মী মেধা পাটকরও। তিনি এ দিন শিলিগুড়িতে বলেন, ‘‘যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, বিজেপি বেছে বেছে তাঁদেরকেই নিশানা করে। সমাজে অমর্ত্য সেনের যথেষ্ট নামডাক রয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলেই তাঁকে নিশানা করেছে বিজেপি।’’ মেধার আরও বক্তব্য, ‘‘প্রশ্ন তোলায় এর আগে বহু সমাজকর্মী ও মানবাধিকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জেলে ঢোকানো হয়েছে। আমিও তালিকায় আছি।’’

আরও পড়ুন: ধনখড়কে সরাতে বলে রাষ্ট্রপতির কাছে তৃণমূল

আরও পড়ুন: সৌরভের বাড়িতে অশোক ভট্টাচার্য, রাজনীতিতে না আসার পরামর্শ মহারাজকে

অমর্ত্যবাবুর প্রতি দিলীপবাবু-সহ বিজেপি নেতাদের আক্রমণ অবশ্য এই প্রথম নয়। তিনি সব সময় সাম্প্রদায়িকতা ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং মুক্ত চিন্তার পক্ষে মত প্রকাশ করেন বলে এর আগেও বহু বার তাঁকে গেরুয়া শিবিরের নিশানা হতে হয়েছে। এ দিন দিলীপবাবু আরও বলেন, ‘‘এখন কথা উঠেছে, অমর্ত্য সেনের জমিটা নাকি বিশ্বভারতীর জায়গায়। তাঁর জবাব দেওয়া উচিত, কাগজপত্র দেখানো উচিত। আর যদি তা না হয়, তা হলে মিথ্যা কথা বলার জন্য ওঁর মামলা করা উচিত। আর যদি সত্য কথা হয়, যদি বেরোয় কব্জা করা অভ্যাস, তখন তো জবাব দিতে হবে! তখন কি নোবেল পুরস্কার ফেরত দেবেন বাঙালিকে অপমান করার জন্য?’’ এই সূত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করে দিলীপবাবু বলে, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথ্যপ্রমাণ দেওয়া উচিত। কারণ উনি ছুটে গিয়ে ঝোল টানছেন।’’ এ দিন গড়বেতায় দিলীপবাবু বলেন, ‘‘যে দিন হিন্দুরা সংখ্যায় কমে যাবে, সে দিন এই ভাল ভাল কথা বলার লোক থাকবে না। তখন কোনও অমর্ত্য সেন এখানে আসবেন না ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে। গণতন্ত্রের কথা কেউ বলবেন না। আমেরিকা-ইংল্যান্ডে পালিয়ে যাবেন।’’

প্রসঙ্গত, বিজেপি বিরোধী তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস— ওই তিন দলই মনে করিয়ে দিয়েছে, দিলীপবাবু ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় নিজেকে পলিটেকনিক কলেজ থেকে উত্তীর্ণ বলে দাবি করেছিলেন। পরবর্তী কালে তথ্যের অধিকার আইনের জোরে জানা যায়, দিলীপবাবু পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রই ছিলেন না। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনকে হলফনামায় দিলীপবাবু জানান, তিনি আইটিআই উত্তীর্ণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Ghosh BJP Amartya Sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy