—ফাইল চিত্র।
এ বার পশ্চিমবঙ্গকে ‘দেশদ্রোহীদের গড়’ বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই সব লোককে প্রশ্রয় দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সবাই সমান দোষে দুষ্ট।’’
তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস— সকলেই দিলীপবাবুর এই মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ করেছে। তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী তাপস রায় ব্রিটিশের কাছে ‘মুচলেকা’ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি-র পূবর্সূরিদের দিকে। দিলীপবাবুকেই ‘দেশদ্রোহী’ বলে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি মনীষীদের অবদানের কথা তুলে বলেছেন, দিলীপবাবুর ওই মন্তব্যে সমগ্র জাতির অপমান। দেশপ্রেম শেখানোর কোনও অধিকার সঙ্ঘ পরিবারের নেই।
দিলীপবাবু মঙ্গলবার খড়্গপুরে বলেন, ‘‘যেখানে বন্দে মাতরম্, জয় হিন্দের স্লোগান উঠেছে, সেখানে যদি কেউ পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে, তা হলে ভাবতেই হবে এটা দেশদ্রোহীদের গড় হয়ে গিয়েছে। এই দেশদ্রোহীদের আখড়া থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে হবে। বাংলাই দেশ তথা দুনিয়াকে রাস্তা দেখাবে। বাংলাকে দেশদ্রোহী-মুক্ত এবং দেশপ্রেমিকদের এক করার চেষ্টা করছি আমরা।”
আরও পড়ুন: তৃণমূল কর্মী খুনে অভিযুক্ত বিধায়ক
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর)-এর বিরোধীরা গত শনি ও রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরে ধর্মতলা-সহ শহরের বহু জায়গায় ‘গো ব্যাক মোদী’ স্লোগান দিয়ে দিনভর জমায়েত করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে দিলীপবাবুর এ দিনের মন্তব্য, ‘‘যেখানে সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্যামাপ্রসাদ, চৈতন্য, রামকৃষ্ণের মতো মহাপুরুষ জন্মেছেন, সেখানে অর্বাচীনেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী গো ব্যাক বলে! যাদের অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গাদের গো ব্যাক বলার হিম্মত নেই, তারা প্রধানমন্ত্রীকে গো ব্যাক বলছে।’’
দিলীপবাবু রবিবারই বলেছিলেন, যারা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করছে, তাদের অসম, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশের মতো গুলি করে মারা উচিত। এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তাঁরা তা-ই করবেন। তাঁর এই মন্তব্যের পর বিজেপির ভিতরে-বাইরে নিন্দার ঝড় ওঠে। তার পরেই মঙ্গলবার বাংলাকে ‘দেশদ্রোহীর গড়’ বলে নতুন বিতর্ক। বিজেপি সূত্রের খবর, ধারাবাহিক ভাবে দিলীপবাবুর হিংসাত্মক ও অস্বস্তিকর মন্তব্যে দলীয় নেতৃত্ব বিড়ম্বনায়। বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আগামিকাল, বৃহস্পতিবার বা পরশু, শুক্রবার দলের রাজ্য সভাপতি ঘোষণা হওয়ার কথা। দিলীপবাবু রাজ্য সভাপতি পদে ফিরবেন কি না, তা নিয়েও চর্চা চলছে রাজ্য বিজেপির একাংশে। দলে কারও কারও মতে, রাজ্য সভাপতি পদে নতুন মুখ আনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে দিলীপবাবুকে কেন্দ্রের মন্ত্রী করে দিল্লিতে সরিয়ে নেওয়া। দলেরই অন্য অশের মত, দিলীপবাবুকেই সভাপতি রেখে অন্য কাউকে কার্যকরী সভাপতি করা হতে পারে। যেমন অমিত শাহকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রেখে জগৎপ্রকাশ নড্ডাকে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। দলীয় সূত্রের দাবি, দিলীপবাবুকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বার বার বারণ করা সত্ত্বেও তিনি কুভাষা প্রয়োগে বিরত হননি। যা দলের ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকর হয়েছে। তাই এখন তাঁকে নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। তিনিই ফের রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন কি না, প্রশ্নে দিলীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘জানি না। দল যা দায়িত্ব দেবে, পালন করব। অন্য দায়িত্বে পাঠালে চলে যাব।’’
এ দিকে দিলীপবাবু বাংলাকে ‘দেশদ্রোহীদের গড়’ বলায় তৃণমূলের তাপসবাবু বলেন, ‘‘সুভাষচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের ইতিহাস-ধন্য বাংলা। দিলীপ ঘোষের থেকে বাঙালির দেশপ্রেমের শংসাপত্র প্রয়োজন নেই। ওঁর রাজনৈতিক পূর্বসূরিদের ব্রিটিশের কাছে মুচলেকার ইতিহাসও বাংলা তথা দেশ জানে।’’ সিপিএম নেতা সেলিমের মন্তব্য, ‘‘দিলীপবাবু ভুলে গিয়েছেন, যে জাতীয় সঙ্গীতের জন্য উনি উঠে দাঁড়ান, সেটা এক জন বাঙালির লেখা। সঙ্ঘের কোনও দালালের নয়। ওই মন্তব্য করে এই সব ব্যক্তিত্বকে দেশদ্রোহীর তকমা দিলেন দিলীপবাবু।’’ আর কংগ্রেসের মান্নানের কটাক্ষ, ‘‘উলুখাগড়ার কথায় কী যায় আসে? যাঁদের নেতা নাথুরাম গডসে, স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁদের কোনও শহিদ নেই, তাঁদের কাছ থেকে দেশপ্রেম শিখব না।’’
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত বীরভূমের মহম্মদ বাজারে এ দিন বলেছেন, ‘‘দিলীপ ঘোষই সবথেকে বড় দেশদ্রোহী। আমি ভাবছি, কেন্দ্র কেন এখনও দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতার করছে না। উনি থাকলে সমগ্র জাতির ক্ষতি। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে গ্রেফতার করা।’’ দিলীপবাবুর গুলি করার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় অনুব্রত বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত দিলীপ ঘোষকেই গুলি করা।’’
তবে গোটা বিষয়ে দলের অন্দরে ও বাইরে ইতিমধ্যেই নিন্দিত হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। গুলি করে মারার হুমকি দেওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় অভিযোগ জমা পড়ছে থানায়। রানাঘাট এবং হাবড়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন তৃণমূল কর্মীরা। আর বৌবাজার থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি মহম্মদ শাদাব খান। ওই মন্তব্যের জন্য পুলিশকে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। দিলীপবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে থানায় জমা পড়া কোনও অভিযোগকেই আমল দিতে চান না। তিনি বলেন, ‘‘এফআইআর তো আমার বিরুদ্ধে অজস্র হয়েছে। তাতে কি বিজেপিকে আটকানো গেছে? অজস্র মারধর, হুমকি, মিথ্যে মামলা সত্ত্বেও আমরা লোকসভায় ১৮টা আসন জিতেছি। তৃণমূলের রাজনীতি দেউলিয়া। তাই তারা এ ভাবে পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী স্বর রোধ করার চেষ্টা করছে।’’ যুব কংগ্রেসের অভিযোগ নিয়ে দিলীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কংগ্রেস নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করছে। তাই ওই অভিযোগ করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy