Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
CPM

বঙ্গ সিপিএমের সাংগঠনিক কাঠামো বদলাবে? ফিরবে লোকাল, জ়োনাল কমিটি? বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন মত

গত নভেম্বরে সিপিএম রাজ্য কমিটির যে বর্ধিত অধিবেশন করেছিল, তাতে স্পষ্টই বলা ছিল, বুথ স্তরেই লুকিয়ে রয়েছে গাফিলতির ভূত। ধারাবাহিক চেষ্টা করেও সেই ভূত তাড়াতে পারেনি সিপিএম।

Different views are emerging from the districts regarding the restructuring of the state CPM organization

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫৯
Share: Save:

বঙ্গ সিপিএমের সাংগঠনিক কাঠামোর কি পুনর্বিন্যাস হবে? ভোট বিপর্যয়ের পর্যালোচনা পর্বে এই প্রশ্নেই বিবিধ মত উঠে আসছে জেলা থেকে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারাও মানছেন, ‘নানা মুনির নানা মত’ রয়েছে। তবে কোচবিহার থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পর্যন্ত সব জেলা থেকে ওই বিষয়ে পর্যবেক্ষণ শোনার পরেই দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। যা চূড়ান্ত হতে পারে অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে নদিয়ার কল্যাণীতে অনুষ্ঠিতব্য রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে। আবার এ-ও হতে পারে, তার আগে এ ব্যাপারে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সিদ্ধান্ত নিয়ে কল্যাণীর বর্ধিত অধিবেশনে সম্মেলন সম্পর্কে নির্দেশিকা জারি করে দিল।

সেপ্টেম্বর মাস থেকেই সারা দেশে সিপিএমের শাখা স্তরের সম্মেলন শুরু হয়ে যাবে। আগামী বছর এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেস। তার দিনক্ষণ এবং স্থান এখনও চূড়ান্ত না হলেও আগামী এপ্রিলে যে পার্টি কংগ্রেস হবে, তা ঘোষণা করে দিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরিরা। শাখা সম্মেলন এবং পার্টি কংগ্রেসের মাঝের সময়ে মধ্যবর্তী স্তরের কমিটিগুলির সম্মেলন প্রক্রিয়া হবে।

কী কাঠামো ছিল? এখন কী রয়েছে?

২০১৭ সালের আগে বঙ্গ সিপিএমে শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে দু’টি কমিটি ছিল। লোকাল কমিটি (এলসি) এবং একাধিক লোকাল কমিটি নিয়ে জ়োনাল কমিটি (জ়েড সি)। ২০১৫ সালে কলকাতায় সিপিএমের প্লেনাম (সংগঠন সংক্রান্ত বিষয়ের সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের পর সেটাই ছিল সিপিএমের প্রথম প্লেনাম। সেই প্লেনামের পরেই রাজ্যে লোকাল এবং জ়োনাল কমিটির অবলুপ্তি ঘটায় সিপিএম। শাখা ও জেলা কমিটির মধ্যবর্তী স্তরে একটিই কমিটি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। সেই সময়ে দলের মনোভাব ছিল, একাধিক কমিটি থাকায় কাজের কাজ হচ্ছে না। দলের মধ্যে ‘আমলাতন্ত্র’ বাড়ছে। বর্তমানে সিপিএমে শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে একটি কমিটিই রয়েছে— এরিয়া কমিটি।

একটা সময়ে এলসি, জ়েড সি ছিল বঙ্গ রাজনীতিতে প্রচলিত শব্দবন্ধ। বাম জমানায় এই এলসি, জ়েড সি-র বিরুদ্ধেই জেলায় জেলায় অভিযোগ ছিল, স্থানীয় স্তরের বিভিন্ন বিষয়ে ছড়ি ঘোরানোর। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সিপিএমের এই কমিটির নেতারাই পুলিশ, উকিল, বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। অনেক ক্ষেত্রেই পার্টি অফিসগুলি হয়ে উঠেছিল থানার বিকল্প।

কী কী মত জেলার?

উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, তাঁরা লোকাল কমিটি এবং জ়োনাল কমিটির স্তর ফিরিয়ে আনার পক্ষে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এক নেতা তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে কোন কোন লোকাল কমিটি ভেঙে-গড়ে জ়োনাল কমিটি গঠন করা হবে, সে বিষয়ে খসড়া প্রস্তুত করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন বলে সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেক নেতাই মানছেন, জেলা এবং শাখা স্তরের মাঝে দু’টি স্তর ফিরিয়ে আনার বিষয়ে স্বর শোনা যাচ্ছে। আবার হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলির বক্তব্য, একাধিক স্তর করে অনেককে কমিটির নেতা করা যাবে ঠিকই, কিন্তু সংগঠন পুনর্নিমাণের কাজ বাস্তবায়িত হবে না। অনেকে আবার স্তর না বৃদ্ধি করে বিকল্প পন্থার কথাও বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, লোকাল কমিটি, জ়োনাল কমিটি ফেরানোর প্রয়োজন নেই। তবে এরিয়া কমিটিগুলিকে ভেঙে ছোট এলাকায় লোকাল কমিটি গড়া হোক। তাতে শাখা এবং বুথ স্তরের কাজ এবং সেই কাজের পর্যালোচনা করতে সুবিধা হবে। রাজ্য সিপিএমের একাধিক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, দলের কমিটিতে ইতিমধ্যেই বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা হয়েছে। এই পরিস্থিতে জেলা ও শাখার মাঝে স্তর বৃদ্ধি করলে সেই ঊর্ধ্বসীমাও অদলবদল করতে হবে। সেটা কতটা সম্ভব, তা নিয়েও বিভিন্ন মত রয়েছে দলে।

কী ভাবছে দল?

সিপিএম নেতৃত্ব বিবিধ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সব বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষপাতী। তাঁদের বক্তব্য, একাংশ চাইবে কমিটিতে নিজেরা থাকতে এবং তাদের ‘পছন্দের লোক’কে জায়গা করে দিতে। কিন্তু দলের উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে শাখা এবং বুথ স্তরের কাজ পরিচালনা ও পরিচর্যা করার মতো দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি করা। যাঁরা কেবল মিটিং করে চলে আসবেন না। ধরে সংগঠন গড়ে তুলবেন। গত নভেম্বরে সিপিএম যে রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন করেছিল, তাতে স্পষ্টই বলা ছিল, বুথ স্তরেই লুকিয়ে রয়েছে গাফিলতির ভূত। ধারাবাহিক চেষ্টা করেও সেই ভূত তাড়াতে পারেনি সিপিএম। ফল: লোকসভা ভোটে দলের প্রতীকে লড়াই করা ২৩ জনের মধ্যে জামানত খুইয়েছেন ২১ জন। সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘সম্মেলন সংক্রান্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্দেশিকা দেবে। তার পরে তার ভিত্তিতে আমরা রাজ্যগত ভাবে নির্দেশিকা তৈরি করব। পর্যালোচনা পর্বে আমরা দলের ভিতরের এবং বাইরের মানুষের মতামত শুনছি। সেখানেও বিবিধ প্রস্তাব আসছে। সব দেখেশুনে নিয়েই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Md Salim Biman Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE