এসএসসির ‘অযোগ্য’ বা ‘দাগি’ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এখনও পর্যন্ত সেই নির্দেশ কার্যকর করার বিষয়ে রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়নি চাকরিহারাদের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটও। এই অভিযোগে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হল কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী। মামলা দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল এসএসসির চাকরি বাতিলের মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। বাতিল করে দেওয়া হয় ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল। ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি যায়। ওই নির্দেশেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, যাঁরা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ (টেন্টেড), তাঁদের বেতনও ফেরত দিতে হবে। আদালতের সেই নির্দেশের পর দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। অভিযোগ, এখনও কেউ বেতন ফেরত দেননি। রাজ্য সরকারের তরফে বেতন ফেরত নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়নি। মামলাকারীর আরও অভিযোগ, এসএসসি মামলায় উত্তরপত্র প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এখনও সেই নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। কোনও উত্তরপত্র প্রকাশ করা হয়নি। মূলত এই দু’টি বিষয়ে বৃহস্পতিবার আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত চলাকালীন সিবিআই অনেক ওএমআর শিট উদ্ধার করেছিল। কমিশনের কাছে সেগুলি আছে। আদালত সেগুলিই প্রকাশ্যে আনার কথা বলেছিল। এ প্রসঙ্গে আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের সচিব, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কমিশনার অফ স্কুলের বিরুদ্ধে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করেছি। যাঁরা প্রমাণিত দাগি, তাঁদের বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশ বহাল রাখে। কিন্তু এখনও কেউ টাকা ফেরত দেননি। টাকা ফেরত নেওয়ার চেষ্টাও রাজ্য সরকারের কেউ করেনি। এ ছাড়া, ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিল, দ্রুত ২২ লক্ষ ওএমআর শিট প্রকাশ করতে হবে। তা এখনও করা হয়নি। যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে, বেতনের পোর্টালে এখনও তাঁদের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রমাণিত ‘দাগি’রাও রয়েছেন। আমাদের বক্তব্য, পোর্টাল থেকে তাঁদের নাম বাদ দিতে হবে। প্রকৃত ‘দাগি’দের তালিকা প্রকাশ করতে হবে, যাতে কোনও অযোগ্য নতুন করে পরীক্ষায় বসতে না-পারেন। এই মর্মে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করেছি।’’
চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের পর মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জানিয়েছিল। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় সঙ্কটের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তারা জানিয়েছিল, যাঁরা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত নন’, তাঁদের চাকরি আপাতত বজায় রাখা হোক। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন ‘দাগি’ নন এমন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্য সরকারকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং সেই মর্মে হলফনামা দিতে হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে আদালত। তার মাঝেই হাই কোর্টে মামলায় আবার অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার।