প্রায় তিন বছর ধরে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে বন্ধ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা দেওয়ার কাজ। ফলে প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে হলফনামার জন্য আদালতে আসা অসংখ্য মানুষ প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের হয়রান হতে হচ্ছে। প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়ে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে জেলার অন্য আদালতে। কিন্তু সেখানেও তাঁদের কাজ না হওয়ায় যেতে হচ্ছে কলকাতায়। আর এই সমস্যার সুযোগ নিয়েই সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্র। ভোগান্তির পাশাপাশি ন্যায্য খরচের চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করে সমস্যা মেটাতে হচ্ছে হলফনামা করাতে আসা মানুষজনকে।
উলুবেড়িয়া আদালতের অধীনে সাতটি থানা এলাকা। সম্পত্তি, ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত নানা কাজ, পুরসভা, পঞ্চায়েত, যে কোনও আর্থিক সংস্থা এবং বহু সরকারি কাজে জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, ওবিসি তফসিলি জাতি-উপজাতি সংক্রান্ত শংসাপত্রে বর্তমানে নোটারি পাবলিক প্রদত্ত হলফনামার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। পরিবর্তে সর্বত্রই গুরুত্ব বেড়েছে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট প্রদেয় হলফনামার। এমনকী সরকারি ভাবেও সমস্ত ক্ষেত্রে এই হলফনামার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামার জন্য আদালতের দারস্থ হচ্ছেন সকলে। ফলে আগের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে চাহিদা। উলুবেড়িয়া, বাগনান, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একশ থেকে দেড়শ জন উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন হলফনামার জন্য। কিন্তু উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে ওই কাজ বন্ধ থাকার কারণে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে আমতা ও হাওড়া জেলা আদালতে। তবে সেখানেও বিপত্তি বাধছে এলাকা বিভাজন সংক্রান্ত সমস্যায়।
উলুবেড়িয়া, শ্যামপুুর, বাগনান উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের অধীন হওয়ায় আমতা, হাওড়ার বিচার বিভাগীয় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা এখানকার বাসিন্দাদের কোনও শংসাপত্রের হলফনামা করতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে হলফনামা করতে ছুটতে হচ্ছে কলকাতার সিটি সিভিল কোটর্, ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। সেখানে পড়তে হচ্ছে দালাল চক্রের খপ্পরে।
শ্যামপুরের বাসিন্দা গোলাম সিদ্দিকি বলেন, “একটা হলফনামা করাতে এখানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হত। এখন কলকাতার আদালতে দালালদের খপ্পরে পড়ে সেই হলফনামা করাতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচা হচ্ছে। তার উপর রয়েছে যাতায়াতের খরচ। তাতেও প্রায় ১০০ টাকার মতো খরচ। এই অবস্থায় একটা হলফনামা করাতে গেলে পকেট থেকে প্রায় হাজার টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। হচ্ছে সময় নষ্টও।”
মহকুমার আইনজীবীদের দাবি, সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবে তাঁরা একাধিকবার বিচারবিভাগের বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। মহকুমা আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের (সিভিল) সহ-সভাপতি শেখ আসরাফ আলি, আইনজীবি নিধুরাম নন্দী বলেন, “আমরা হাইকোট-সহ অন্যান্য দফতরেও বহুবার সমস্যার কথা জানিয়েছি। এখনও কোনও সাড়া মেলেনি। জানি না সমস্যার সমাধান কবে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy