লোকসভা ভোটে শেষমেশ এ রাজ্য থেকেই ‘এন্ট্রিয়াঁ’ নিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। তারকা প্রার্থীকে পেয়ে গোটা জেলার বিজেপি শিবিরেই ‘দিল কি ঘণ্টিয়া’ বাজতে শুরু করে দিল।
শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে মুম্বইয়ের এই সঙ্গীতশিল্পীর নাম ঘোষণা হয়েছে বৃহস্পতিবার। শুক্রবার আবার শ্রীরামপুর কেন্দ্রে ঘোষণা হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নানেরও নাম। বহু টালবাহানার পরে শেষমেশ ভোটে দাঁড়ানোয় মত দিয়েছেন প্রবীন এই কংগ্রেস নেতা। ভোটের ঢাকে কাঠি পড়লেও শ্রীরামপুরে সেই উত্তেজনাটা এত দিন তেমন ভাবে অনুভূত হচ্ছিল না। গতবারে এই কেন্দ্রে জয়ী প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বহু আগেই ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। পরে সিপিএমও তীর্থঙ্কর রায়কে এই কেন্দ্রে টিকিট দেয়। দু’দল প্রচার শুরু করলেও কংগ্রেস এত দিন প্রচারে গা ঘামাতেই পারছিল না। কারণ, আব্দুল মান্নান শেষমেশ এই কেন্দ্রে দাঁড়াবেন কিনা, এমনকী তিনি আদৌ রাজনীতিতে থাকবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় নামের জায়গা খালি রেখেই চলছিল কংগ্রেসের দেওয়াল লিখন। এ দিন শ্রীরামপুর রবীন্দ্রভবনে মান্নানের প্রতিক্রিয়া, “আমি শারীরিক অসুস্থতার কথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে দাঁড়াতেই হল। দলীয় কর্মীদের আবেগের কাছে আমি হেরে গেলাম।”
অন্য দিকে, হাওড়া সদর কেন্দ্রে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়াচ্ছেন মনোজ পাণ্ডে। বছর একচল্লিশের এই যুবক দীর্ঘ দিন রাজনৈতিক কর্মী। নরসিংহ দত্ত কলেজে ছাত্র পরিষদ থেকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। পরে যুব কংগ্রেস হয়ে বর্তমানে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র এবং এআইসিসি সদস্য। হাওড়ার ভূমিপুত্র মনোজবাবু থাকেন মধ্য হাওড়ায়।
কিন্তু বাপ্পিদার নাম ঘোষণায় অন্য মাত্রা পেয়েছে শ্রীরামপুর কেন্দ্রটি। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব আগেই জানিয়েছিলেন, এই আসনটিতে প্রার্থী নিয়ে তাঁরা চমক দেবে। কথা রেখেছেন দলের নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে শ্রীরামপুরে বাপ্পি লাহিড়ির নাম ঘোষণা হওয়ায় বিজেপি শিবির তো উচ্ছ্বসিত বটেই, সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, এমন বহু মানুষের কাছেও খবরটি আকর্ষণীয়, সন্দেহ নেই। সব মিলিয়ে এ বার ভোটের বাজার জটজমাট গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন এই শহরে। এখন দিন গোনা, কবে প্রচারে আসবেন বাপ্পি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল উনি শ্রীরামপুরে ২৫ অথবা ২৬ তারিখে যাবেন। কিন্তু জেলার নেতারা চাইছেন, উনি ২৩ তারিখেই শ্রীরামপুরে যান। এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করব।” দলের জেলা সহ-সভাপতি স্বপন পালের প্রতিক্রিয়া, “বাপ্পিবাবুর হয়ে ভোটের প্রচারে নামার জন্য কর্মীরা মুখিয়ে আছেন।”
বাপ্পিবাবু এ দিন বলেন, “শ্রীরামপুর আমার পছন্দের শহর। বহু অনুষ্ঠানে সেখানে গিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আমাকে ভালবাসেন। আশাকরি অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আমি তাঁদের ভালবাসা পাব।” বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, শ্রীরামপুর কেন্দ্রে হিন্দি ভাষাভাষি মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন মুম্বই থেকে হিন্দিতেও সড়গড় বাপ্পি বাড়তি সুবিধা পাবেন। তা ছাড়া, সঙ্গীতকার হিসাবে তাঁর জনপ্রিয়তা ভোটব্যাঙ্কে প্রতিফলিত হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।
কিন্তু কংগ্রেস-সিপিএম তো ছিলই। বিজেপির তারকা প্রার্থী কী বাড়তি চাপে ফেলবেন? কল্যাণবাবু স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই উত্তর দেন, “বাপ্পির গানে শ্রীরামপুরে অন্তত পদ্মফুল ফুটবে না। ওঁর সম্পর্কে একটাই কথা বলার, মুম্বইসে আয়া মেরা দোস্ত দোস্তকো সেলাম করো!”
এখন দেখার, বাপ্পিদার এত দিনের নামডাক, অলঙ্কারের চমকে শেষমেশ কতটা মজেন শ্রীরামপুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy