শ্রীরামপুরে মহিলা পরিচালিত বুথ। ছবি: প্রকাশ পাল।
ভোট মানেই সন্ত্রাস আর গণ্ডগোল, এমনটাই ছোট থেকে জেনে এসেছেন ধনেখালির স্কুল শিক্ষিকা রীতা পাল। বাড়িতে, পাড়ায় সরকারি চাকরি করা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের ভোটের ডিউটি করতে যেতেও দেখেছেন। কিন্তু সেই দায়িত্ব যখন নিজের উপর এসে পড়ল, তখন খানিকটা আশঙ্কাই হয়েছিল, পারব তো? কিন্তু নিজের আশঙ্কা নিজেই দূর করে তত্পরতার সঙ্গে দিব্যি ভোটের কাজ সামলালেন ধনেখালির পঙ্কজিনী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ের এই দর্শনের শিক্ষিকা।
মহিলা সরকারি কর্মীদের এ বারই প্রথম ভোটের কাজ দেওয়া হয়েছে রাজ্যে। বিভিন্ন বুথে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার হিসেবে কাজ করছেন তাঁরা।
ধনেখালির ওই স্কুলেই ধনেখালির ১৩৮ নম্বর বুথ। ভোটার ৬৬৬ জন। বুথে ঢোকার মুখে চোখে পড়ল কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্পরতা। ভিতরে ভোটের কাজ করছেন চার মহিলা। বছর পঁয়ত্রিশের রীতাদেবী প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও তিন শিক্ষিকা--সাবিত্রী মাণ্ডি, রূপশ্রী চক্রবর্তী ও মৌপিয়া সান্তারা। পোলিং অফিসারের কাজ করছেন তাঁরা। সকলেরই বাড়ি হুগলিতে। কারও তারকেশ্বর, কারও বা শিবাইচণ্ডীতে। মঙ্গলবারই ভোটের ‘ডিউটি’ করার জন্য স্কুলে চলে এসেছেন তাঁরা।
রীতাদেবী বলেন, “ভোট মানেই অসন্তোষ, গণ্ডগোল বলে জানতাম। পরিচিত যাঁরা ভোটের ডিউটি করতে যেতেন, তাঁদের কাছে শুনেছি, এ সব নাকি খুব ঝক্কির ব্যাপার। এ বার আমাকেও সেই কাজ করতে যেতে হবে শুনে খুব ভয় লাগছিল। ভাবছিলাম, কাজে ভুল-ত্রুটি হলে যদি নির্বাচন কমিশন শাস্তি দেয়! কিন্তু এখন দেখছি, তেমন কোনও কঠিন কাজ না। প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হচ্ছিল ঠিকই। এখন আর হচ্ছে না। উল্টে ভালই লাগছে।’’
অন্য তিন পোলিং অফিসারও জানালেন, “এমনিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াই। কিন্তু এ বার প্রথম ভোট-কর্মী হিসেবে কাজ করলাম। অনেক কিছু শেখা গেল। আগে তো শুধু ভোট দিয়েছি। এ বার এই কাজটাও বেশ উপভোগ করলাম।”
এই ভোটকর্মীরা আরও জানান, মেয়ে ভোটের ‘ডিউটি’ করতে যাচ্ছে শুনে চিন্তার শেষ ছিল না তাঁদের পরিবারের। রীতাদেবী বললেন, “বাড়িতে তো সবাই খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। বারবার বাড়ি থেকে ফোন আসছিল। কিন্তু এখন বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছি, সব ঠিক রয়েছে। ওঁরাও নিশ্চিন্ত।”
সকাল থেকে ভোট দিতে ওই বুথে দফায় দফায় এসেছেন ভোটাররা। কৃষিপ্রধান ওই এলাকায় সবাই একসঙ্গে মাঠের কাজ ফেলে আসতে পারেননি। কাজের ফাঁকেই পালা করে এসে ভোট দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
কয়েক জন মহিলাকে ভোটকর্মী হিসেবে দেখে প্রথমে বিরক্তই হয়েছিলেন ভোটারদের একাংশ। কিন্তু পরে তাঁদের কাজে ও ব্যবহারে খুশি বাসিন্দারাও। স্থানীয় এক বাসিন্দা অমল পাল যেমন বলেন, “প্রথমে মহিলাদের দেখে ভেবেছিলাম, এঁরা কি ভোটের কাজ করতে পারবেন? হয়তো আমাদের ভোটটাই নষ্ট হবে। কিন্তু এঁদের কাজ এবং ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ। মেয়েরাও যে ভোট-কর্মী হতে পারেন, তা আমরা বুঝতে পেরেছি।”
সারা দিন পরিশ্রমের পরেও মুখের হাসি ধরে রেখেছেন রূপশ্রীরা। জানান, ভোট মিটলে নির্দিষ্ট জায়গায় ইভিএম জমা দিয়ে বাড়ি ফিরবেন। বললেন, “মঙ্গলবার এসেছি। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দরা খুবই সহযোগিতা করেছেন। এক সঙ্গে কাজ, থাকা, সবাই মিলে রান্না করে খাওয়া, হাসি-ঠাট্টায় একটা দিন যেন পিকনিকের মতো কেটে গেল। এটা মিস করব। তবে হয়তো পরে আবার কখনও একসঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy