Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

দুর্নীতির অভিযোগ, সিঙ্গুর কলেজের ভবন নির্মাণ বন্ধ

নতুন শিক্ষাবর্ষ চালু হতে আর মাত্র চার মাস বাকি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের সিঙ্গুর কলেজের জন্য ভবন তৈরির কাজ শুরুতেই থমকে গিয়েছে। এখনও একটি ইটও পড়েনি। উল্টে, প্রস্তাবিত ভবনের জমিতে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ ওঠায় গোটা বিষয়টিই চলে গিয়েছে প্রশাসনিক তদন্তের আওতায়। ফলে, বন্ধ নির্মাণকাজ।

এই রাস্তা তৈরি নিয়েই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

এই রাস্তা তৈরি নিয়েই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪৬
Share: Save:

নতুন শিক্ষাবর্ষ চালু হতে আর মাত্র চার মাস বাকি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের সিঙ্গুর কলেজের জন্য ভবন তৈরির কাজ শুরুতেই থমকে গিয়েছে। এখনও একটি ইটও পড়েনি। উল্টে, প্রস্তাবিত ভবনের জমিতে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ ওঠায় গোটা বিষয়টিই চলে গিয়েছে প্রশাসনিক তদন্তের আওতায়। ফলে, বন্ধ নির্মাণকাজ।

হুগলি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ওই রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে জেলা পরিষদের অন্দরেই এখন বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে। ঘটনাটি নিয়ে রাজ্য সরকার অস্বস্তিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জেলা পরিষদের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এটা বাস্তব। এডিএম পদমর্যাদার এক অফিসারকে দিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত করা হবে। তারপরই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে ওই অভিযোগ প্রসঙ্গে। আপাতত ওখানে সব ধরনের নির্মাণকাজ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।”

গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলিতে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে এসে ওই কলেজ নির্মাণের কথা ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে সিঙ্গুর মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের অংশে কলেজের ক্লাসও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেখানে পরিকাঠামোগত নানা সমস্যায় জেরবার ছাত্রছাত্রীরা। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন কলেজ ভবনে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

কলেজ ভবনটি তৈরি হওয়ার কথা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া বারুইপাড়া-পলতাগড় পঞ্চায়েতের ঘনশ্যামপুরের সরকারি জমিতে। এ জন্য টাকাও বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। জেলা পরিষদের কাছ থেকে বরাত পেয়ে কয়েক মাস আগে ভবনের জমির সঙ্গে মূল সড়কের সংযোগকারী রাস্তাটি (৮৫০ মিটার লম্বা) তৈরিতে হাত দেয় ঠিকাদার সংস্থা। ভবনের জমি সমান করার কাজও চলতে থাকে সমান তালে। কিন্তু স্থানীয় স্তর থেকেই ওই রাস্তা নির্মাণে নানা অভিযোগ পৌঁছয় জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গুরে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে বলেই মত দেয় প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। এর পরেই কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আটকে দেওয়া হয় ঠিকাদারের বিলও।

রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ কী রকম? চুক্তি না মেনে নির্ধারিত মাপের চেয়ে রাস্তাটি ১৬৭ মিটার কম বানানো হয়েছে। রাস্তাটি মোট ২২ ইঞ্চি পুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছে মাত্র ১৩ ইঞ্চি পুরু। নির্মাণকাজে নির্ধারিত যে কাঁচামাল দেওয়ার কথা ছিল, তা না দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে ঝামা এবং পুরনো ইট। সরকারি ইট ব্যবহারেও অনিয়ম হয়েছে। রাস্তার ধারের পুকুর বাঁধানোর কাজ ঠিকমতো হয়নি। রয়েছে বিলে অসঙ্গতিও।

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে প্রশাসনের কর্তারাও এই সব অভিযোগের সারবত্তা খুঁজে পান। গোটা কাজটির তদারকির দায়িত্বে ছিলেন দুই কর্মাধ্যক্ষ। ফলে, তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে জেলা পরিষদের অন্দরেই। এ নিয়ে জেলা পরিষদের বৈঠকে কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে তুমুল বিতণ্ডাও হয়। বৈঠক থেকেই দাবি ওঠে ঘটনার তদন্তের।

হুগলি জেলা পরিষদের ক্ষমতায় রয়েছে রাজ্যের শাসক দলই। কিন্ত ওই রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জেলা পরিষদের কোনও সদস্যই মুখ খুলতে চাননি। তবে, জেলার শাসক দলের এক নেতা জানিয়েছেন, ওই অভিযোগ ঘিরে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দল কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

singur college gautam bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE