বিডিও অফিসে সৌরভ।—নিজস্ব চিত্র।
মুদির দোকানে উদয়াস্ত খেটে সংসার চালান বাবা। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা পরিবারের। সেই পরিবারের ছেলে সৌরভের হাতে এসেছিল কয়েক লক্ষ টাকা। রাস্তায় পড়ে পাওয়া। সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সৌরভ বিশ্বাস এখন ‘হিরো’ বলাগড়ের ডুমুরদহ পঞ্চায়েতের ঐশ্চিতপুর এলাকায়।
স্বপন বিশ্বাসের ছেলে সৌরভ পড়ে কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে। মেধাবী ছাত্র। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাচ্ছিল সে। দাদপুর মুচিফটকের কাছে তার সাইকেলের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় একটি মোটর বাইক। সৌরভের চোখে পড়ে, ওই বাইক থেকে নীল রঙের একটি ব্যাগ পড়ে গেল রাস্তায়। সাইকেল থামিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে সৌরভ দেখে, ভিতরে টিফিন বাক্স ও দু’টি স্ট্যাম্প পেপার। বাক্সে ঢাকনা খুলেই চক্ষু চড়কগাছ। দেখা যায়, এক হাজার টাকার ৩টি এবং পাঁচশো টাকার ২টি বান্ডিল!
সৌরভ জানায়, টাকার ব্যাগ নিজের বইয়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে শনশন করে সাইকেলে টান দেয় সে। এক কিলোমিটার গিয়ে মোটর বাইক আরোহীকে দেখতেও পেয়ে যায়। সে গিয়ে জানতে চায়, “আপনার কী কিছু হারিয়েছে?” অপরিচিত কিশোরের এ হেন প্রশ্নে থতমত খেয়ে ওই ভদ্রলোক নিজের বাইকের পিছনে ঘুরে দেখেন। ব্যাগ নেই দেখে কাঁদতে শুরু করেন। ব্যাগ ফেরত পেয়ে সৌরভকে জড়িয়ে ধরেন ভদ্রলোক। সৌরভ জানায়, ভদ্রলোক তাকে ৫০০ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটুকুও সবিনয়ে ফিরিয়ে দেয় সে। বলে, “বাবা বলেছেন, রাস্তায় পড়ে থাকা কোনও জিনিস বাড়িতে আনবে না। কেউ টাকা দিতে চাইলেও কখনও নেবে না।”
সৌরভ স্কুলে গিয়ে সহপাঠীদের বলে গোটা ঘটনা। কথাটা কানে ওঠে শিক্ষকদেরও। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা ডুমুরদহ নিত্যানন্দপুর-১ পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার সকালে সৌরভকে নিয়ে নিজেই হাজির হন বলাগড়ের বিডিওর দফতরে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৌরভকে শংসাপত্র দেওয়া হয়। বিডিও রণজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, “দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও অতগুলো টাকার লোভ না করে সৌরভ টাকা-ভর্তি ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে সততার পরিচয় দিয়েছে। তার পড়াশোনার জন্য সরকারি ভাবে ব্যবস্থা করা যায় কিনা, চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।” বিডিও জানান, পুলিশকে নিয়ে টাকার ব্যাগের মালিকের খোঁজ চলছে।
স্বপনবাবু বলেন, “অর্থলোভ মানুষের সর্বনাশের পথ। এ থেকে নিজেকে সংযত রাখতে পারলে জীবনে উন্নতি হবে। সব সময় ছেলেকে বোঝাই, সাধারণ ঘরের ছেলে সাধারণ ভাবেই থাকতে হয়। ছেলে সেই শিক্ষা নিয়েছে, তা জানতে পেরে বাবা হিসাবে আমি গর্বিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy