Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সস্তার চালই কি সিঙ্গুরের ভবিষ্যৎ, কটাক্ষ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির

সাংবাদিক বৈঠকে অধীর। বিএনআর গেস্ট হাউসে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

সাংবাদিক বৈঠকে অধীর। বিএনআর গেস্ট হাউসে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

এক সময়ে যেখানকার মানুষ বহুফসলি জমিতে ধান ফলাতেন, সেখানকার মানুষকেই কেন লাইনে দাঁড়িয়ে সস্তার সরকারি চাল নিতে হবে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে সে প্রশ্ন তুললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

বুধবার সন্ধ্যায় সিঙ্গুর স্টেশন-লাগোয়া মাঠে সভা করেন অধীর। জমি আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে সিঙ্গুরের মানুষকে ‘প্রাজ্ঞ’ ও ‘সচেতন’ বলে সম্মান জানান অধীর। বলেন, “আপনাদের নতুন করে কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। একটা বিশাল আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আপনারা সিঙ্গুরকে বিশ্ববাসীর সঙ্গে পরিচিত করেছেন।” সিঙ্গুরের মানুষ অনুঘটকের কাজ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। যার ব্যাখ্যায় ১৮৯৪-র জমি আইন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিঙ্গুরবাসীর আন্দোলনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “সিঙ্গুরের মানুষ সরকারকে না ভাবালে এই আইন পরিবর্তন সম্ভব ছিল না।”

কিন্তু সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনেই অধীর এ দিন রাজ্যের শাসক দলের সমালোচনাও করেন। বস্তুত, এ রাজ্যে ক্ষমতায় এসে সিঙ্গুরে টাটাদের প্রস্তাবিত গাড়ি কারখানার জমি অধিগ্রহণ অবৈধ বলে বিধানসভায় অর্ডিন্যান্স আনেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরবাসী ধরেই নেন, জমি ফেরত পাওয়া এ বার সামান্য সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু তাঁদের সেই আশায় জল ঢেলে বিষয় গড়ায় মামলা-মোকদ্দমায়। রাজ্য সরকারের অর্ডিন্যান্সকেই অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

ইতিমধ্যে দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুরবাসীর ধৈর্যচ্যূতি ঘটছিল, তা আঁচ করতে পারে শাসক দল। সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক চাষিদের জন্য সস্তায় চাল-টাকার নানা প্যাকেজ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তারপরে দীর্ঘ দিন কেটে গেলেও মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় অনিচ্ছুক চাষি পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দানা বেঁধেছে বলে শাসক দলের একাংশও মেনে নেন।

সিঙ্গুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ছবি: দীপঙ্কর দে।

রাজনীতিতে দীর্ঘকালের পোড়খাওয়া অধীর সেই বিষয়টিকেই এ দিন কৌশলে সামনে আনতে চেয়েছেন। এই প্রসঙ্গে সিঙ্গুরের সঙ্গে একসারিতে নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। অধীরবাবু বলেন, “সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মানুষ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় এনেছেন। কিন্তু রাজ্য সরকার যদি এই সব মানুষের জন্য সততার সঙ্গে ভাবত, তা হলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু সিঙ্গুরের ভবিষ্যৎ কি সস্তার চালেই আটকে থাকবে?” তিনি আরও বলেন, “এক সময়ে এখানকার মানুষ ধান উৎপাদন করতেন। পরে তাঁদেরই সরকারি চালের লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হয়েছে।” চুঁচুড়ায় সভা সেরে এ দিন সিঙ্গুরেও অধীরের সঙ্গে ছিলেন হুগলি কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী প্রীতম ঘোষ। মঞ্চে ফ্লেক্স টাঙিয়ে ছিল কংগ্রেস। সেখানে লেখা, “অনিচ্ছুক জমির ফসল মহাকরণেই উঠেছে। তাপসীর দেহের পাশে যমজ ফুল ফুটেছে।”

সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা স্বভাবতই ভাল চোখে দেখছেন না শাসক দলের নেতারা। জমি আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অন্যতম সৈনিক, বর্তমানে রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “ওঁরা হলেন ভোটপাখি। সিঙ্গুর স্টেশন লাগোয়া সাতমন্দিরতলায় (এখানেই এ দিন সভা করেছেন অধীর) মাচা না বেঁধে আন্দোলনের মূল এলাকায় গেলেন না কেন? তা হলেই তো সিঙ্গুরের মানুষের মনের কথা জানতে পারতেন।” বেচারামবাবুর আরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর সস্তার চাল-টাকাকে উনি কটাক্ষ করছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস কেন্দ্রে কত বছর ক্ষমতায় থেকেছে? ১৮৯৪ সালের ব্রিটিশ আইন কেন ওঁরা এত দিন জিইয়ে রেখেছিলেন? মানুষ এ সবের জবাব ভোটের মেশিনেই দেবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

singur adhir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE