Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

জীবিকা হারানোর ক্ষোভ বুকে নিয়েই ভোট দেয় সভাইপুর

দশ বছর আগেও সন্ধ্যার পরে কেউ বাড়ির বাইরে পা রাখতে সাহস দেখাতেন না সভাইপুরে। সারা দিন বোমা-গুলির শব্দে আতঙ্কে থাকতেন মানুষ। দুষ্কৃতীদের ডেরায় পরিণত হয়েছিল বনগাঁর ধর্মপুকুরিয়া পঞ্চায়েতের এই এলাকা।

সংস্কার না হওয়ায় পানায় ভরে গিয়েছে ন’বাওর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সংস্কার না হওয়ায় পানায় ভরে গিয়েছে ন’বাওর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৮
Share: Save:

দশ বছর আগেও সন্ধ্যার পরে কেউ বাড়ির বাইরে পা রাখতে সাহস দেখাতেন না সভাইপুরে। সারা দিন বোমা-গুলির শব্দে আতঙ্কে থাকতেন মানুষ। দুষ্কৃতীদের ডেরায় পরিণত হয়েছিল বনগাঁর ধর্মপুকুরিয়া পঞ্চায়েতের এই এলাকা। এখন অবশ্য দুষ্কৃতী তেমন নেই, ঝামেলাও অনেক কমেছে। কিন্তু তাতে কী? দীর্ঘ দিন বাওর ও খালের সংস্কার না হওয়ায় কার্যত চাষই করতে পারেননি এলাকার বেশিরভাগ মানুষ। কার্যত জীবিকা হারিয়েছেন তাঁরা।

বনগাঁ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের হয়ে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিত্‌ দাস এলাকায় প্রচারে গেলে তাঁর সামনে নিজেদের সমস্যার কথা উগরে দেন গ্রামবাসীরা।

সভাইপুরে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের বাস। বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজে যুক্ত। পানচিতা বাওর, ন’বাওর দিয়ে ঘেরা এই এলাকা। বছরের এই সময়ে পানচিতা ও ন’বাওরের জল সরে গেলে চাষিরা চরে বোরো ধান চাষ করেন। কিন্তু এ বার বাওরের জল না সরায় বোরোধান চাষ করতে পারেননি প্রায় কেউই। রাজীব বৈদ্য নামে এক চাষির কথায়, “বাওরের ধারে পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। জল সরে গেলে অন্য বছর ধান চাষ করি। কিন্তু এই বছর বাওর সংস্কার না হওয়ায় জল সরেনি।” গ্রামবাসীরা জানান, সব মিলিয়ে এলাকার প্রায় তিন হাজার চাষি এ বার ক্ষতিগ্রস্ত। পানচিতা ও ন’বাওর, নকফুল বাওরের মধ্যে দিয়ে ইছামতীতে মিশেছে। স্থানীয় জয়সিংখাল ও সীতানাথপুর খালের সংস্কারের দাবি করেছেন বাসিন্দারা।

শুধু যে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত, তাই নয়, রাস্তা সংস্কারও থমকে রয়েছে। দরকার একটা হাইস্কুলের। সন্ধ্যার পরে আলো জ্বলে না গ্রামে।

পিচ না পড়া সভাইপুরের রাস্তা।

এলাকার মূল রাস্তাটা এখনও ইটের। গ্রামবাসীদের অনুযোগ, ইটের রাস্তায় মালপত্র নিয়ে যাতায়াত করতে অসুবিধা হয়। স্থানীয় মেদের মাঠের প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তাটি মাটির। গ্রামবাসীরা চান, ইটের রাস্তায় পিচ পড়ুক। বাসিন্দাদের কথায়, “খেত থেকে ভ্যানে করে মালপত্র বোঝাই করে ওই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে খুবই অসুবিধা হয় চাষিদের।”

এলাকায় বিদ্যুত্‌ সংযোগ থাকলেও সন্ধ্যার পরে রাস্তার আলো জ্বলে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এলাকার একটি স্কুল উচ্চ প্রাথমিকে উন্নীত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পড়াশোনা এখনও শুরু হয়নি। দরকার একটা হাইস্কুলেরও। স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষিতিশ রায় বলেন, “এখান থেকে মাধবপুর বা মনিগ্রামে হাইস্কুলের দূরত্ব প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। পানচিতা বাওর পেরিয়ে চাঁদা এলাকায় স্কুলের দূরত্ব প্রায় দু’ কিলোমিটার। কিন্তু বাওরে খেয়া পারাবারে সমস্যা থাকে। কচুরিপানা থাকায় খেয়া মাঝেমধ্যে বন্ধও থাকে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে তাই দুর্ভোগে পড়তে হয়।”

শুধু কি স্কুল? সামান্য খেলার মাঠটুকুও বর্ষায় জলের তলায় চলে যায় বলে জানালেন বাসিন্দাদের। গ্রামবাসী আবদুল্লা মণ্ডল, মামুদ বিশ্বাসরা বলেন, “খাইমেলার মাঠে এলাকার লোকজন সামান্য খেলাধুলো করেন। কিন্তু বর্ষায় তা জলের তলায় চলে যায়। বর্ষার পর জল সরতে তিন মাস লেগে যায়।” বিধায়কের কাছে মাটি ফেলে খেলার মাঠটি উঁচু করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। বিশ্বজিত্‌বাবুও আশ্বাস দিয়েছেন, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মাটি ফেলে উঁচু করে দেবেন খেলার মাঠ।

কিন্তু কেন এমন অবস্থা গ্রামের?

ধর্মপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতটি এখন বামেদের দখলে। যদিও সভাইপুর এলাকায় পঞ্চায়েতের তিন জন সদস্যই তৃণমূলের। পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের সন্তোষ রায় গ্রামবাসীদের সমস্যার বিষয়ে বলেন, “বাওর সংস্কারের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কচুরিপানা তোলা যায় না। তাই থমকে গিয়েছে কাজ।” রাস্তা পিচের করার ব্যাপারে তাঁর যুক্তি, “পঞ্চায়েত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো আগে তৈরি করা হচ্ছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে, ওই রাস্তাটি করা হবে।”

বিশ্বজিত্‌বাবু অবশ্য জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে রাস্তাটি পিচের করে দেওয়া হবে। বাওর ও খাল সংস্কারের বিষয়টি সেচমন্ত্রীকে জানানো হবে।”

জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল বলেন, “সভাইপুরের মানুষের দাবি পূরণ করা হবে।”

যদিও এলাকার মানুষের প্রশ্ন, ভোট পেরিয়ে গেলে তাঁদের সমস্যার কথা আর কেউ মনে রাখবে কি?

উত্তর মিলবে ভোটের পরেই।

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

অন্য বিষয়গুলি:

election savaipur simanto moitra bongaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy