Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Baguiati Students Murder

সমন্বয়ের ফাঁক বোজাতে বৃহস্পতিবার বৈঠক ডিজি-র

পুলিশের একাংশের মধ্যে যে সমন্বয়ের অভাব বা গা-ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছে, তা এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন কর্তা। সেই সমন্বয় দ্রুত ফেরাতেই ডাকা হয়েছে বৈঠক।

জোড়া খুনে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বাগুইআটি থানার সামনে বামেদের বিক্ষোভ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

জোড়া খুনে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বাগুইআটি থানার সামনে বামেদের বিক্ষোভ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:০৩
Share: Save:

নিছক গাফিলতি নয়, বাগুইআটির দুই কিশোরের শোচনীয় মৃত্যু পুলিশের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবটাও অনাবৃত করে দিয়েছে। সেই গাফিলতি, সেই সমন্বয়ের অভাব নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) থেকে অন্য কর্তারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, পুলিশের ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যে ক্ষুব্ধ, সেটা তিনি বুধবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় সমন্বয় বাড়াতে আজ, বৃহস্পতিবার সব জেলার পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি, আইজি-এডিজিদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন ডিজি মনোজ মালবীয়। ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেটের সিপিদেরও উপস্থিত থাকার কথা।

পুলিশের একাংশের মধ্যে যে সমন্বয়ের অভাব বা গা-ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছে, তা এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন কর্তা। সেই সমন্বয় দ্রুত ফেরাতেই ডাকা হয়েছে বৈঠক। রাজ্য পুলিশের কর্তাদের বক্তব্য, বাগুইআটি থানা তদন্তে গাফিলতি বা গড়িমসি করেছে, এটা পরিষ্কার। নিখোঁজ বা অন্তর্ধান মামলার প্রাথমিক নিয়ম হল পার্শ্ববর্তী থানা ও জেলার সঙ্গে যোগাযোগ করা। এ ক্ষেত্রে সেটাও করেনি বাগুইআটি থানা। দুই অজ্ঞাতপরিচয় কিশোরের দেহ উদ্ধারের পরে নিয়ম মেনে বসিরহাট জেলা পুলিশ সংশ্লিষ্ট সব জায়গাতেই তা জানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাগুইআটি থানার তদন্তকারীরা সেই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাই উদ্ধারের পরে দু’টি দেহ দু’সপ্তাহ মর্গে পড়ে থাকা সত্ত্বেও তা জানতে পারেননি তদন্তকারী অফিসার।

এক পুলিশকর্তার পর্যবেক্ষণ, এর জন্য যন্ত্র-নির্ভরতা অনেকটা দায়ী। আগে আশপাশের থানা বা জেলায় ফোন করে নিখোঁজ বা অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহ শনাক্ত করার চেষ্টা করা হত। কিন্তু এখন সেটা উধাও। এখন ই-মেল করে বা পোর্টালে দিয়েই কাজ সারছেন অফিসারেরা। অন্য এক পুলিশকর্তার অভিযোগ, বাগুইআটি থানা দুই কিশোরের অন্তর্ধানের বিষয়টিকে প্রথমে কোনও গুরুত্বই দেয়নি। ফলে উচ্চপদস্থ কর্তারা জানতেনই না যে, এমন কিছু ঘটেছে। আর এতেই পুলিশ বিভাগের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবটা প্রকট হয়ে গিয়েছে।

বাগুইআটির ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কেউ নিখোঁজ থাকলে তাঁর বিষয়ে জানার জন্য বিভিন্ন থানার সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে। রাজ্য পুলিশের কর্তাদের তরফে বুধবারেই সব থানায় ওই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় কারও দেহ উদ্ধার হলে সেই ব্যক্তির ছবি ই-মেল করে বা মিসিং পোর্টালে যেমন পাঠানো হচ্ছে, তেমনই পাঠানো হোক। সেই সঙ্গে আশপাশের জেলা বা থানাগুলিকে, বিশেষ করে কন্ট্রোল রুমকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট থানাকে। পুলিশকর্তারা জানান, এই বিষয়ে কোনও এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) তৈরি করা যায় কি না, সেটাও ভেবে দেখা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, দেহ উদ্ধারের পনেরো দিন পরে ময়না-তদন্ত করে কেন জানতে হচ্ছে, এটা খুন না আত্মহত্যা? কেন পুলিশকর্মারা দেহ দেখে প্রথমেই তা বুঝতে পারলেন না? রাজ্য পুলিশের কর্তারা অবশ্য এটাকে গাফিলতি হিসেবে দেখছেন না। তাঁদের দাবি, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জেলায় আসে অনেক দেরি করে। তা ছাড়া দুই কিশোরের দেহে নাকি বাইরে থেকে দেখা যায়, এমন কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। একটি দেহের সঙ্গে ইট বাঁধা ছিল, যা সাধারণত আত্মহত্যার ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে এই বিষয়ে সেখানকার পুলিশ অফিসারদের ভাল করে খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা।

রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন জানান, যে-কোনও দেহের ময়না-তদন্তের সময় তদন্তকারী অফিসারের সেখানে থাকা দরকার। যাতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেই জন্য সব থানাকে প্রতিটি দেহের ময়না-তদন্তের সময়, বিশেষ করে অজ্ঞাতপরিচয় দেহের ময়না-তদন্তের সময় এক জনকে উপস্থিতি থাকতে বলা হয়েছে। যাতে ময়না-তদন্তের দিন মৃত্যুর প্রাথমিক কারণটা অন্তত জানা যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Baguiati Students Murder police Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE