Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Queen Elizabeth II Death

রাজত্বের সত্তর-পূর্তিতে তাঁর নকশার পোশাক-মুকুট পরেন রানি, সেই কন্যাকে খুঁজে পেল আনন্দবাজার অনলাইন

চলে গেলেন রানি এলিজাবেথ। সেই ১৯৬১ সালে বাংলায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২২ সালেও বাংলার সঙ্গে তাঁর যোগ রয়ে গিয়েছে। সেই যোগসূত্র তৈরি করেছেন হুগলির প্রত্যন্ত গ্রাম বাদনানের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা মল্লিক।

হুগলির বাদনান গ্রামের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তার ডিজাইন করা পোশাক পরবেন ব্রিটেনের রানি।

হুগলির বাদনান গ্রামের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তার ডিজাইন করা পোশাক পরবেন ব্রিটেনের রানি। নিজস্ব চিত্র

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:২৬
Share: Save:

কোথায় লন্ডনের ব্যাকিংহাম প্যালেস আর কোথায় হুগলির বাদনান গ্রাম! সিঙ্গুরের কাছে বললেও ভুল হয়। স্টেশন থেকে প্রথমে টোটোয়, তার পরে হেঁটে যেতে হয় সেই প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানে বসেই একটি মেয়ে স্বপ্ন দেখেছিল, তার ডিজাইন করা পোশাক পরবেন ব্রিটেনের রানি। মেয়ের নাম প্রিয়াঙ্কা মল্লিক। বয়স এখন আঠাশের আশপাশে।

প্রিয়াঙ্কা স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁর বানানো নকশায় তৈরি হবে ইংল্যান্ডের রানির মকুট। এক দিন স্বপ্ন সফলও হয়ে গিয়েছিল। সাহসে ভর করে প্রিয়াঙ্কা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন নিজের স্বপ্নের ডিজাইন। রাজপরিবারের তা পছন্দও হয়ে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে রানির রাজত্বের ৭০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় এলিজাবেথ পরেন সেই ডিজাইনে তৈরি পোশাক। মাথায় প্রিয়াঙ্কার নকশায় তৈরি মুকুট।

রানির নকশার মুকুট দেবী দুর্গাকে পরাতে রাজবাড়ির অনুমোদন প্রিয়াঙ্কার হাতে।

রানির নকশার মুকুট দেবী দুর্গাকে পরাতে রাজবাড়ির অনুমোদন প্রিয়াঙ্কার হাতে। নিজস্ব চিত্র

প্রিয়াঙ্কার বাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামে হলেও তাঁর স্বপ্নটা প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। মা গৃহবধূ। ভাইকে নিয়ে চার জনের মধ্যবিত্ত সংসার। সেই বাড়ির মেয়ে ছোট থেকেই আঁকা শিখতেন। সঙ্গে লেখাপড়াও। পাড়া থেকে জেলা স্তরের প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার পেয়েছেন আঁকার জন্য। কিন্তু একটু বড় হতেই ঠিক করে ফেলেন, ডিজাইনার হতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না। তাই অনলাইনেই ইতালির মিলানের একটি সংস্থা থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোর্স করেন। এর পরে ঠিক করেন নিজেই ফ্যাশনের ব্যবসা করবেন। ভর্তি হয়ে যান আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসে। প্যারিসের অ্যাবাইড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্য দিকে, ডিজাইনিংয়ের কাজ চলতে থাকে। নিজের ব্যবসাও শুরু করে দেন।

আনন্দবাজার অনলাইনকে প্রিয়াঙ্কা শুক্রবার বললেন, ‘‘ছোট থেকেই কেন জানি না, রানি এলিজাবেথকে ভাল লাগত। ওঁর ছবি দেখেই মনে হত, একদিন রানির পোশাকের ডিজাইন করব। কিন্তু ছবি আঁকার কোনও প্রথাগত শিক্ষা আমার নেই। পড়াশোনার চাপে সেটা করতে পারিনি। নিজে নিজেই অভ্যাস করে যেতাম। তারই ফল পেয়েছি।’’

কী করে স্বপ্ন আন্তর্জাতিক হল? প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘মিলানে একটা আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইন প্রতিযোগিতা হয়েছিল। অনলাইনেই হয়েছিল সেই প্রতিযোগিতা। সেই সুযোগটা কাজে লাগাই। সেরার পুরস্কারও পাই।’’ এর পরেই রাজবাড়ির পোশাকের ডিজাইন করার সাহস পান প্রিয়াঙ্কা।

রানির মৃত্যুসংবাদে কি প্রিয়াঙ্কার মনেও আঘাত লেগেছে? প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘‘আমার থেকে অনেক অনেক দূরে উনি থাকতেন। আমাকে উনি কখনও চোখেও দেখেননি। আমিও ওঁকে দেখিনি। কিন্তু আমার শিল্প, আমার পরিশ্রম দিয়ে তৈরি ডিজাইনের পোশাক, মুকুট পরেছেন উনি। তাই কোথায় যেন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বয়স হয়েছিল ওঁর। কিন্তু তবুও মৃত্যুর খবরটা পেয়ে খুবই খারাপ লাগছে।’’ রানির শতবর্ষের পোশাকেরও ডিজাইন করার ইচ্ছা ছিল প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল হুগলির মেয়ের।

তবে এখন অন্য স্বপ্ন দেখছেন তিনি। রানিকে যে নকশার মুকুট পরিয়েছিলেন, সেই একই রকম মুকুট এই পুজোয় মা দুর্গাকে পরাতে চান প্রিয়াঙ্কা। ইতিমধ্যে সেই কাজও শুরু করে দিয়েছেন। উত্তর কলকাতার একটি পুজো কমিটির সঙ্গে কথাবার্তা পাকা। রানির মুকুটের মতো আরও একটি মুকুট বানাতে ব্রিটেনের রাজ পরিবারের অনুমতি লাগবে। কিছু দিন আগে সেই অনুমোদনও প্রিয়াঙ্কা হাতে পেয়েছেন। ব্যাকিংহাম প্যালেস থেকে রানির চিঠি এসেছিল হুগলির প্রত্যন্ত বাদনান গ্রামে।

অন্য বিষয়গুলি:

Queen Elizabeth II Death Howrah Fashion Designer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE