সরঞ্জাম: ডাবগ্রামে এক বাঁশের দোকানে ক্রেতারা। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে জলের লাইনের কাজ করাতে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের জাহাঙ্গির হোসেন পাইপ কিনতে গিয়েছিলেন। দোকানের কর্মচারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘ক’টুকরো করব?’’ জাহাঙ্গির আঁতকে উঠতে নিরাসক্ত উত্তর এল, ‘‘সবাই তো এখন বড় পাইপ কিনে তিন-চার ফুটের ছোট ছোট টুকরোই করে নিচ্ছে।’’ জাহাঙ্গির কথা বাড়াননি। এই এলাকারই সাগির হোসেন যেমন ঠিক করেছেন, ভোট মিটলে কোদালের ভাঙা বাঁট পাল্টাবেন। কেন? ডোমকলের বাসিন্দারা বলছেন, শনিবার এলাকায় তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের মধ্যে যে গন্ডগোল হয়েছে, তাতে জলের পাইপ, কোদালের বাঁট এবং উইকেট দিয়ে মারধর করতে দেখা গিয়েছে দু’পক্ষের কর্মীদেরই। উইকেটের তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতি চমকে দিয়েছে, একান্তে মানছেন শাসকদলের নেতারাও।
ওই বাসিন্দাদের মতে, হাতের কাছে সহজে পাওয়া যায়, এমন অনেক কিছুই অস্ত্র হয়ে উঠছে। যেমন, নমনীয় জলের পাইপ সহজে ভাঙে না, মারলে খুব জোরে লাগে, তাই তা-ও এখন ‘অস্ত্র’। ৫০০ টাকায় এমন লম্বা পাইপ মেলে যে, সেটা কেটে ছ’টা ফাঁপা ‘লাঠি’ তৈরি করে নেওয়া যায়। তার সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছে উইকেট, কোদালের বাঁট, হাঁসুয়ার মতো ধারালো অস্ত্র এবং অবশ্যই বাঁশ।
ভোট বাজারে কাঁচা বাঁশের চাহিদা বেড়েছে সব চেয়ে বেশি। শিলিগুড়ি লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বাঁশের লাঠির অর্ডার দিয়ে রাখছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মেদিনীপুর শহরে একটা গোটা কাঁচা বাঁশ ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক একটি বাঁশ থেকে ৪-৫টি চার ফুট বা তার থেকে সামান্য বড় লাঠি বানানো হয়। গড়বেতায় ঝাড় থেকে বাঁশ কাটতে দেখা গিয়েছে শাসক থেকে বিরোধী সব পক্ষকেই। আকাশমণি গাছের ডালে দলীয় পতাকা বেঁধে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। কাঠের লাঠি, জলের পাইপ, সরু লোহার রডেও বাঁধা হচ্ছে পতাকা। মনোনয়ন পর্ব শুরু হতেই পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর, কাঁথি, খেজুরি, ভগবানপুরেও প্রচুর কাঁচা বাঁশ কেনা হচ্ছে। কাঠের বাটামেরও
বিক্রি বেড়েছে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহের এক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘হঠাৎ করে লগি বাঁশের চাহিদা বেড়েছে। ১৫-২০ ফুটের বাঁশ ৪৯ টাকা দরে বিক্রি করছি।’’
মঙ্গলবার মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ঠিকই তো। ঝাড়ে আর বাঁশ নেই। সব বাঁশ হাতে চলে এসেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি ৬ মাস আগেই বলেছিলাম, কাঁচা বাঁশ কেটে রাখতে। তার ফলেই তো এত শান্তি চারদিকে!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, ‘‘তৃণমূলের কাছে বোমা রয়েছে, গুলি রয়েছে। ওগুলো ফাউ। সাধারণ মানুষ বাঁচার জন্য লাঠি নিয়ে যায়।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক উত্তর দিনাজপুরের আলি ইমরান রমজের (ভিক্টর) অবশ্য সোজা বক্তব্য, “মনোনয়নপত্র তোলা এবং জমা দেওয়ার সময় আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা হচ্ছে। তা থেকে বাঁচতে বাঁশ হাতে করে ব্লক অফিসে যাচ্ছে সবাই।’’
এ বারের ভোটপর্ব শুরু হতে গুলিও চলেছে। তার ইতিহাসও অনেক দিনের। বাম আমলে কেশপুর-গড়বেতার রাজনৈতিক সন্ত্রাস কার্যত ‘মডেলে’ পরিণত হয়েছিল। লোহার পাইপে উল্টো করে ইংরেজি ভি-র মতো স্ট্যান্ড লাগিয়ে ভক্সল বলে একটি অস্ত্র তৈরি করা হত। ভক্সলে বোমা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হত। সে আমলেই কেশপুরে মুখে মুখে ফিরত ‘অ্যাকশন ডাং’, যা আসলে বাঁশের গোড়ার ফুট তিনেক কেটে, এক দিকে মোটা পেরেক লাগানো অস্ত্র। আবার, সাইকেলের টায়ার কেটে এক দিকের ভিতরের তার বের করে বানানো হত আর এক রকম অস্ত্র, যা চাবুকের মতো কাজ করত।
এ সব থেকে মাথা বাঁচাতে হাজার থেকে পনেরোশো টাকা দামের হেলমেটও বিক্রি হচ্ছে দেদার। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া। বিরোধীরা বাঁশ কিনছেন খবর পেয়ে আমাদের কেউ কেউ বোধহয়হেলমেট কিনছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy