আরজি কর-কাণ্ডে কি এক জনই জড়িত? না কি আরও কেউ জড়িত ছিলেন? আরজি করের ঘটনায় আরও তদন্ত চেয়ে আবেদনের শুনানিতে সেই প্রশ্নই উঠে এল কলকাতা হাই কোর্টে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সোমবার এই মামলার শুনানিতে জানান, এই ঘটনায় ইতিমধ্যে এক জন অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। কিন্তু অভিযুক্ত কি একাই ছিলেন, না কি আরও কেউ ছিলেন? সেই প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি ঘোষ। তাঁর মন্তব্য, এটি গণধর্ষণ, না কি নয়, তা আদালতের কাছে স্পষ্ট করুক সিবিআই। আরজি কর মামলায় সিবিআইকে কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
আরজি কর মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তে সন্তুষ্ট নন নির্যাতিতার পরিবার। আরও তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। পরে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিসাপেক্ষে গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা। সোমবার ওই মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টে। আরজি কর মামলায় প্রথম চার্জশিট ইতিমধ্যে পেশ করা হয়েছে। তার পরে এখন সিবিআই কী তদন্ত করছে, তা-ও জানতে চান বিচারপতি। সোমবার রাজ্যের তরফে হাই কোর্টে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলায় বিচার শেষ হওয়ার পরে আরও তদন্ত হতে পারে কি না, তা নিয়ে এজলাসে সংশয় প্রকাশ করেন কল্যাণ।
পরে এজলাসের বাইরে পরিবারের আইনজীবী শামিম আহমেদ রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার চাইছে না তদন্তটি হোক। সেই জন্যই তারা বলছে, আরও তদন্ত হলে তাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু আইনে অসুবিধা আছে। এর দ্বারা তারা বোঝাতে চাইছে, তদন্ত তারা চাইছে না। তারা ইতি চাইছে, বিচার চাইছে না।” সোমবার এজলাসে উপস্থিত ছিল নির্যাতিতার পরিবারও। শুনানির পরে এজলাসের বাইরে নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা জানান, তিনি আদালতে সঠিক বিচার পাবেন বলেই আশা করছেন। শুক্রবারের মধ্যে সিবিআইকে এই মামলার কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
আরও তদন্তের আবেদন সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশের পরে কিছুটা আশাবাদী আরজি করের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। জুনিয়র ডাক্তার আশফাকউল্লাহ নাইয়া আদালতের নির্দেশের পরে বলেন, “অবশ্যই এটি (মামলা) গতি পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মনে যে প্রশ্নগুলি ছিল, সেগুলি হয়ত এ বার আমরা আস্তে আস্তে জানতে পারব!”
আরও পড়ুন:
তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল পরিবার। তাদের বক্তব্য, অনেক রহস্যের উদ্ঘাটন হয়নি সিবিআই তদন্তে। তাই পরিবারের সদস্যেরা চাইছেন, মামলায় আরও তদন্ত করে দেখুক ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শিয়ালদহ আদালত আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার রায় দেওয়ার আগে কলকাতা হাই কোর্টে এই বিষয়ে আবেদন করেছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। সিবিআই তদন্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতের বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চে সেই আবেদন করা হয়। যদিও বিচারপতি ঘোষ সেই সময় নির্যাতিতার পরিবারের ওই আবেদন শুনতে চাননি। বিচারপতি ঘোষ জানিয়েছিলেন, শীর্ষ আদালতের অনুমতি ছাড়া শুনানি সম্ভব নয়। সেইমতো শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় পরিবার। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে হাই কোর্টে ওই মামলার শুনানি হতে পারে। এর পরে সোমবারই এই মামলার প্রথম শুনানি ছিল হাই কোর্টে বিচারপতি ঘোষের এজলাসে।