Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Deforestation

বাড়ছে ভেড়ি, সাফ হচ্ছে ম্যানগ্রোভ

সরকার আছে। আইন আছে। তবু কেউ নেই প্রকৃতি, পরিবেশের। মানুষের। বিষ জল, স্থল, বাতাসে।আমজনতা না হয় ‘দাদাগিরির’ ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। কিন্তু প্রশাসনের এই ভূমিকায় বিস্মিত পরিবেশপ্রেমীরা।

মাটি কাটার যন্ত্রে কাটা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। গোসাবার শম্ভুনগরে। নিজস্ব চিত্র

মাটি কাটার যন্ত্রে কাটা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। গোসাবার শম্ভুনগরে। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল এবং প্রসেনজিৎ সাহা 
কলকাতা এবং গোসাবা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৩৯
Share: Save:

চোখ সয়ে গিয়েছে দ্বীপাঞ্চলের মানুষের। তবু মনে হয়, পাখিগুলো তো আর আসে না! শীতকাল তো এসেছে।

অথচ আগে, উৎসবের মরসুম শেষ হলেই এসে পড়ত পাখিগুলো। খাল-বিলের লাগোয়া গরান-গর্জন-ক্যাওড়া-গেঁওয়া গাছে বাসা বাঁধত। সুন্দরবনের মানুষ বুঝতেন, শীত আসছে। বাদাবনের দ্বীপাঞ্চলের মানুষ এখন বুঝতে পারেন, পাখি এলে থাকবে কোথায়? খাল-বিল-খাঁড়ির ধারের গাছগুলোই তো আর নেই! ম্যানগ্রোভ সাফ করে, সরকারি জমি জবরদখল করে চলছে চিংড়ি চাষ।

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, ম্যানগ্রোভ ধ্বংস নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। আদালত রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। তার পর থেকে হইচই শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। চোখের সামনে এই সবুজ ধ্বংস হতে দেখেও কিছুই করতে পারেননি বাসন্তী ব্লকের মুড়োখালি ও আনন্দাবাদ মৌজার মানুষ। বেবাক হারিয়ে গিয়েছে ১৪০০ বিঘে জমির ম্যানগ্রোভ। বাসন্তী ব্লকের ভরতগড় পঞ্চায়েতের দু'টি মৌজার অবস্থা এমন হলে গোটা সুন্দরবনের হাল কেমন, তার আভাস মেলে বইকি।

আরও পড়ুন: স্নাতক হয়ে ইতিহাস শবর কন্যার

আরও পড়ুন: তৃণমূল জিতলে থাকতে পারব না: মুকুল ॥ ২০১১ মনে করুন: তাপস

আশপাশের এমন হাল দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন বাসন্তীর বাসিন্দা কালাম পৈলান। লাভ বলতে জুটেছিল ভেড়ি সিন্ডিকেটের হুমকি। তাতে থেমে থাকেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনিই মামলা ঠুকেছেন কলকাতা হাইকোর্টে। কালাম বলেন, “বছর দেড়েক আগেও পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলত। হোগল নদীর তীরে এই এলাকায় জঙ্গল সাফ হয়ে গিয়েছে। ফলে পথ বদল হয়েছে পরিযায়ী পাখিদেরও।” হাইকোর্ট রিপোর্ট তলব করার পরেও অবশ্য অবাধে কাটা পড়ছে ম্যানগ্রোভ, জানালেন কামাল।

মুড়োখালি, আনন্দাবাদের পাশাপাশি বাসন্তীর মসজিদবাটী, কাঁঠালবেড়িয়া, রামচন্দ্রখালি, ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা, ইটখোলা, মাতলা-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকা, গোসাবা ব্লকের শম্ভুনগর, কচুখালি, রাধানগর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকাতেও ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের একই ছবি। এখানেও সেই ভেড়ি সিন্ডিকেট। ম্যানগ্রোভ নিধন করে নোনাজল ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ চলছে। যে জমিতে এই কারবার, তার বেশির ভাগই সেচ দফতরের। বাকি জমির মালিক জেলা প্রশাসন। আমজনতা না হয় ‘দাদাগিরির’ ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। কিন্তু প্রশাসনের এই ভূমিকায় বিস্মিত পরিবেশপ্রেমীরা।

তবে এই ধ্বংসলীলা এক দিনের নয়। এলাকার বাসিন্দা মুস্তফা বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত) বলছেন, “ম্যানগ্রোভ ধ্বংস শুরু হয়েছিল বাম আমলেই। কিন্তু তার বাড়বাড়ন্ত গত দশ বছরে। শেষ সাত-আট বছরে জনপদ লাগোয়া এলাকায় প্রায় ৫০ শতাংশ ম্যানগ্রোভ সাফ করা হয়েছে।” শাসকদলের মধ্যে প্রতিবাদ কিছুটা হলেও, লাভ বিশেষ হয়নি। জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল এই ম্যানগ্রোভ ধ্বংস নিয়ে বনমন্ত্রীকে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। দিনকয়েক ধরপাকড়ের পর আবার যে কে সেই।

রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী, আরএসপি নেতা সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘ম্যানগ্রোভ কেটে মাছের ভেড়ি তৈরিকে আমরা কখনও প্রশ্রয় দিইনি। তৃণমূলের নেতারা নিজেদের ইচ্ছেমতো নদীর চরের সরকারি জমির ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করছেন।’’ স্থানীয় বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “যারা ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে ভেড়ি তৈরি করছে, তারা তৃণমূল কর্মী নয়। তারা সমাজের শত্রু। মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরবনে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ শুরু করেছেন।’’

তবে শুধু পরিযায়ী পাখিরাই যে সুন্দরবন থেকে মুখ ফিরিয়েছে তা নয়। ম্যানগ্রোভ ধ্বংসে হাজারো বিপদের কথা শুনিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা। সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলে কী ভাবে বিপদ বাড়বে তার প্রমাণও মিলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Deforestation Mangrove Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy