একটা সময় শীতের শুরুতেই নলেন গুড়ের গন্ধে মম করে উঠত গ্রামের চারপাশ। ফাইল চিত্র।
একটা সময় বাড়ির চারপাশ, চাষের জমির আল, পুকুর পাড় দিয়ে শত শত খেজুরগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতো সারি দিয়ে। শীত দরজায় কড়া নাড়ার আগেই এলাকার শিউলিরা ভোর বেলায় হাজির হয়ে যেত বাড়ির সদর দরজায়। ঘুম ভাঙিয়ে বাড়ির মালিকের কাছে অনুমতি চাইত সেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার। আর অনুমতি মিললে বড় হাঁসুয়া হাতে নিয়ে নাচতে নাচতে উঠে পড়ত গাছে। বলছিলেন মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির সীমান্তের দয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা অসীম মণ্ডল। তাঁর দাবি, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিন বদলেছে। সারি সারি খেজুর গাছ হারিয়ে গিয়েছে। এখন বাড়ি লাগোয়া এলাকায় মেরে কেটে গোটা পঞ্চাশেক গাছ মাথা তুলে আছে। কিন্তু সেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার লোক নেই। এখন শীতের মরসুমে কঠোর পরিশ্রমের ওই কাজ আর কেউ করতে চায় না। ফলে বছরের পর বছর রস সংগ্রহের জন্য ছাঁটা হয় না গাছ।”
একটা সময় শীতের শুরুতেই নলেন গুড়ের গন্ধে মম করে উঠত গ্রামের চারপাশ। সেই সময় একদিকে শীতের সকালে সুস্বাদু খেজুর রস খাওয়ার ধুম যেমন পড়ে যেত, তেমনি ভাবে নলেন গুড়ের তৈরি পিঠে পুলি তৈরি করে আত্মীয় বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করা এবং তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ধুম পড়ে যেত গ্রামে গ্রামে। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ মন্ডল বলছেন, “শীতের শুরুতেই নলেন গুড় দিয়ে নানা রকমের পিঠে পুলি তৈরি হত আমাদের বাড়িতে, আর সেসব খাবার খাওয়ার জন্য আত্মীয়-স্বজন থেকে বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রণ করতাম আমরা। এমনকি আত্মীয়দের বাড়িতে সাইকেল ঠেঙিয়ে সেসব পৌঁছে দিয়ে এসেছি অনেক দিন।” ওই গ্রামের আমিনা বিবি বলছেন, “সে সময় ঘরে ঘরেই ছিল খেজুর গাছ। শিউলিরা সেই গাছ কামিয়ে অর্ধেকটা দিয়ে যেত আমাদের, আর অর্ধেকটা নিয়ে যেত সে। নিজের গাছের সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করতাম গুড় থেকে নানা রকমের খাবার। সেই গুড় বা রস থেকে তৈরি খাবারের স্বাদ ও গন্ধ এখনও চোখ বন্ধ করলে নাকে আসে।’’
শিউলিদের অভাবে পাওয়া যাচ্ছে না খাঁটি নলেন গুড়ে। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে স্বাদ বদল হয়েছে নলেন গুড়ের। এখন খাঁটি গুড় পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের কাছে। এই বছর পনের কুড়িতেই চেহারাটা বদলে গেল। কঠোর পরিশ্রম করে সন্ধ্যায় গাছে হাড়ি বাঁধা আবার সেই ভোর বেলায় রস সংগ্রহ এবং তা জাল দিয়ে গুড় তৈরি করতে চাইছে না এখন শিউলিরা। তাঁরা এখন অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক এর কাজে ভিন্ রাজ্যে। ফলে গাছ থেকে রস না পেয়ে মালিক কেটে ফেলছেন গাছ। আর তাতেই দিনে দিনে সুস্বাদু নলেন গুড়ের জোগান কমছে এলাকায়।
কেবল জোগান কমছে তাই নয়, শিউলিরা পেশা বদল করায় মানও কমেছে গুড়ের। অনেকেই বলছেন, এখনও এই এলাকায় যা মধুবৃক্ষ আছে, তা থেকে ঠিকঠাক রস সংগ্রহ করতে পারলে ভাল গুড়ের জোগান দেওয়া সম্ভব। কিন্তু শিউলির অভাবেই রস সংগ্রহ হচ্ছে না গাছ থেকে। আর তাতেই এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী নলেন গুড়ের নাম নিয়ে ভেজাল গুড় বিক্রি করছেন বাজারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy