Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Baruipur

Barsha Muhuri: পাহাড়ি খরস্রোতে ভেসে বর্ষা ফিরলেন শবাধারে

অমরনাথে মা নিবেদিতাদেবীকে জলের স্রোত থেকে বাঁচাতে পারলেও নিজে ভেসে যান বর্ষা। পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।

বারুইপুরের বাড়িতে এল বর্ষা মুহুরির কফিনবন্দি দেহ। নিজস্ব চিত্র

বারুইপুরের বাড়িতে এল বর্ষা মুহুরির কফিনবন্দি দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২২ ০৭:২৯
Share: Save:

পাহাড়ি ঝঞ্ঝা আর জলের খরস্রোত থেকে বাঁচিয়েছেন মাকে। রবিবার গভীর রাতে বর্ষা মুহুরি (২৪) নিজে বারুইপুরের চক্রবর্তী পাড়ার বাড়িতে ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে। ভোরে হল তাঁর শেষকৃত্য। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুসংবাদ আগে দেওয়া হয়নি হৃদ্‌রোগী চন্দন মুহুরিকে। বাড়ির বাইরে এসে শবাধারের দিকে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন চন্দনবাবু। পরে শ্মশানে মেয়ের মুখাগ্নি করেন তিনিই। বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। তার পর থেকে যোগাযোগ বন্ধ। মেয়ে ছাড়া সকলেরই খবর কানে আসছিল। ওর‌ কিছু একটা হয়েছে এবং আমাকে যে জানানো হচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছিলাম।’’

অমরনাথে মা নিবেদিতাদেবীকে জলের স্রোত থেকে বাঁচাতে পারলেও নিজে ভেসে যান বর্ষা। পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। অমরনাথ যাত্রায় দুর্ঘটনায় পড়েন বারুইপুর পুরসভার ছ’নম্বর ওয়ার্ডের তিন পরিবারের সাত জন। দু’পায়ে গুরুতর চোট লাগে নিবেদিতাদেবীর। বললেন, “ঝড়ঝঞ্ঝার সময় আচমকা পায়ের উপরে বড় পাথরের টুকরো এসে পড়ে। চিৎকার করে উঠেছিলাম। ছুটে আসে বর্ষা। আমাকে তুলতে গিয়ে নিজেই জলে ভেসে গেল।’’

সবার অতি প্রিয়, ছটফটে, মেধাবী ছাত্রী বর্ষা গভীর রাতে কফিনে বন্দি হয়ে পাড়ায় ফেরার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়-পড়শিরা। ভোরে অন্ত্যেষ্টি পর্যন্ত গোটা পাড়াই ছিল বর্ষার অসুস্থ বাবা চন্দনবাবুর সঙ্গে।

মা ও মামা সুব্রত চৌধুরীকে নিয়ে ১ জুলাই বর্ষা যান অমরনাথে। সঙ্গে ছিলেন বিশালাক্ষীতলার বাসিন্দা উজ্জ্বল মিত্র, তাঁর স্ত্রী পারমিতা, মেয়ে ঋষা এবং পারিবারিক বন্ধু উদয় ঘোষ। দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় কমবেশি সকলেই জখম হয়েছেন। ছ’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিকাশ দত্ত বলেন, ‘‘নিবেদিতাদেবীকে বাড়িতে রেখে সব রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত ও আহতদের বাড়ি ফিরিয়ে এনেছেন।’’

রাজ্য সরকার জানিয়েছে, অমরনাথে আটকে আছেন বাংলার ১৬৬ জন। তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২৯, উত্তর ২৪ পরগনার ১৫, হাওড়ার ৩৪, কোচবিহারের ২৩, জলপাইগুড়ির ২২, কলকাতার ১০, পূর্ব মেদিনীপুরের ১০, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১ আছেন। আছেন হুগলির পাঁচ, পশ্চিম বর্ধমানের তিন, নদিয়ার দুই, বাঁকুড়ার এক এবং বীরভূমের এক বাসিন্দা।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্যকর্মী দেবব্রত ঘোষের বাড়ি হাবড়ার বাণীপুরে। সোমবার বাড়ি ফেরার পথে তিনি ফোনে বলেন, “শুক্রবার সকালে হঠাৎ দেখলাম, আলকাতরার মতো কালো মেঘে ঢেকে গেল আকাশ। তৎপরতা বেড়ে গেল সেনাদের। তাঁরা আমাদের আটকে দিলেন। ঝর্নার জল নদীর স্রোতের মতো বয়ে যাচ্ছিল। পাহাড় থেকে কালো জল তীব্র বেগে পড়ছিল। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’

১২ কিলোমিটার আগে থেকেই অমরনাথ দর্শন না-করে ফিরছেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বাসিন্দা মাধব রায়। ৮ জুলাই থেকে বালতালে বেসক্যাম্পে আটকে ছিলেন তিন দিন। মাধববাবু বললেন, ‘‘শুক্রবার বিকেলে এগোনোর ছিল। কিন্তু মেঘভাঙা বৃষ্টি, দুর্যোগ শুরু হয়। বেসক্যাম্পে ভিড় বাড়ছিল। তিনশো টাকার তাঁবুর ভাড়া তিন হাজারে গিয়ে ঠেকে।’’

মেঘভাঙা বৃষ্টির পর থেকে তিন দিন ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না-পেরে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের প্রামাণিক পরিবার। অবশেষে ১০ জুলাই রাতে ছেলে বাপ্পাদিত্য প্রামাণিকের ফোনে স্বস্তি ফিরে পান বৃদ্ধ বাবা অনিলবাবু, মা কল্যাণীদেবী এবং স্ত্রী মৃন্ময়ী মণ্ডল। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক বাপ্পাদিত্যবাবু পরে ফোনে জানান, ৮ জুলাই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে, এটা আশঙ্কা করেই সেনাবাহিনী দ্বিতীয় ক্যাম্প থেকে তৃতীয় ক্যাম্পে যেতে দেয়নি। সেই দিনেই বিপর্যয় ঘটে। তার পর থেকে সেনা শিবিরে ছিলেন তাঁরা। সোমবার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। বাপ্পাদিত্যবাবুরা ফের রওনা দিয়েছেন তৃতীয় ক্যাম্পের উদ্দেশে।

অমরনাথ থেকে ফিরতে শুরু করেছেন উত্তরবঙ্গের পুণ্যার্থীরা। রবিবার গভীর রাতে বালুরঘাটে ফেরেন সাত পুণ্যার্থী। বিপদের মুখে পড়া আলিপুরদুয়ার জেলার তিন জন রবিবার রাতে শ্রীনগর থেকে দিল্লি পৌঁছেছেন। জলপাইগুড়ি জেলার ১৪ জনের মধ্যে কয়েক জন অমরনাথ দর্শনের জন্য সেখানেই রয়ে গিয়েছেন। দুর্যোগের ঠিক আগে বেরিয়ে এসেছিলেন কোচবিহারের দিনহাটার ২৭ জন পুণ্যার্থী। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জন দিনহাটায় ফিরে এসেছেন। ওই জেলার মেখলিগঞ্জের ১২ জন রয়েছেন অমরনাথে বিভিন্ন শিবিরে।

অন্য বিষয়গুলি:

Baruipur Amarnath Yatra dead body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy