আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনছিলাম। কিন্তু কাল দুপুরেই জানতে পেরেছি, ওটা পুরীতে আছড়ে পড়তে পারে।
পুরীতে এসে আটকেই গেলাম। ফেরার সমস্ত ট্রেন বাতিল হয়ে গিয়েছে। শুনছি রবিবার দুপুরের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় জওয়াদ এসে আছড়ে পড়বে এখানে। শোনার পর থেকে ভয়ানক দুশ্চিন্তা হচ্ছে। বয়স্ক বাবা-মা সঙ্গে রয়েছেন। হোটেলের ঘরেই রয়েছি। বাইরে বেরোতে পারছি না। রাস্তায় বেরোলেই পুলিশ ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শুধু খাবার কিনতে যাওয়ায় ছাড় রয়েছে। আজ সকালে বেশির ভাগ দোকানই খোলেনি। শুধু মিষ্টির দোকান খোলা। আর কয়েকটা কচুরি-রুটি-তরকারির দোকান। সকলে মিলেই খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বলল, খাবার ঘরে নিয়ে যান। রাস্তায় বেশি ক্ষণ থাকবেন না।
শুক্রবার সকালে মোবাইলে মেসেজটা এসেছিল। কলকাতায় যাওয়ার জন্য আমাদের ট্রেনটা বাতিল করা হয়েছে। আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনছিলাম। কিন্তু কাল দুপুরেই জানতে পেরেছি, ওটা পুরীতে আছড়ে পড়তে পারে। আর তখন থেকেই দুশ্চিন্তাটা চেপে বসেছে। আজ সকাল থেকেই পুরীর আকাশ স্লেট-রঙা। সকালে যখন হাঁটতে বেরিয়েছিলাম, সমুদ্র তখনও অবধি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, ততই সে উত্তাল হচ্ছে। এখন তো সৈকতের ধারের রাস্তাতেও পুলিশ যেতে দিচ্ছে না। বিচের উপরের সব দোকান বেঁধেছেদে রাস্তার উপর রেখে দিয়েছেন দোকানিরা। গলি পথ দিয়ে এক বার মেরিন ড্রাইভের কাছটায় গিয়েছিলাম। গোটা সৈকত ফাঁকা। রাস্তা দিয়ে শুধু পুলিশের গাড়ি যাচ্ছে। তারই মাথায় মাইক বাঁধা। সেখান থেকেই করা হচ্ছে সতর্কতামূলক প্রচার— ‘‘ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। কেউ বাইরে বেরোবেন না। হোটেলের ভিতরে থাকুন…।’’
বুধবার রাতে হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠেছিলাম। বৃহস্পতিবার ভোরে নেমেছিলাম পুরী স্টেশনে। সেখান থেকে হোটেল। ওই দিনটা ভাল করে ঘুরেছি। কাল থেকেই শুরু হয়েছে জোরদার ফিসফাস… ফণির পুনরাবৃত্তি হবে না তো! ২০১৯ সালের মে মাসে পুরীতেই আছড়ে পড়েছিল ওই ঘূর্ণিঝড়। সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছিল বেশ কয়েক মাস। ফলে, জওয়াদের খবর বাজারে আসতেই ফের সেই সময়কার বৃত্তান্ত আলোচনায় সটান চলে এসেছে। কাল রাতে যখন হোটেলে বসে খাচ্ছি, তখন ম্যানেজারকে প্রশ্নটা করেই ফেলেছিলাম। কোনও সমস্যা হবে না তো? এখন তো বেরোনোর কোনও উপায় নেই। ট্রেন তো বাতিল! উনি আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘‘ফণির সময়েও অনেকে আটকে পড়েছিলেন। থাকা-খাওয়ার কোনও সমস্যা হয়নি তখন। এ বারও হবে না।’’ আশ্বস্ত হয়েছি। কিন্তু তাতে উদ্বেগ কাটেনি মোটেই।
ফণির কথা এত শুনেছি কাল সন্ধ্যা থেকে, পরিস্থিতি আঁচ করে তাই রাতেই মোমবাতি কিনতে গিয়েছিলাম। লোডশেডিং তো হবেই। দোকানি ২টো মোমবাতি দিয়ে বললেন, ‘‘৩০ টাকা।’’ তিরিশ! একটু সঙ্কোচ করে তাঁর জবাব ছিল, ‘‘এমনিতে সাত টাকা পিস। আজ ১৫ নিচ্ছি। কাল কত হবে জানি না।’’ তবে দুটোর বেশি দিলেনও না।
তিন দিনের জন্য এসেছিলাম। আজ রাতেই ফেরার ট্রেন ছিল। এখন আবার নতুন করে টিকিট কাটলাম। সোমবারের। ফলে অতিরিক্ত তিন দিনের থাকা-খাওয়ার খরচ। সাত জনের জন্য সব মিলিয়ে সেই অঙ্কটা খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু সে সব ভাবনার থেকেও এখন বেশি ভাবাচ্ছে কাল দুপুরে কী হবে, সেটা! তার আগে পরেই বা কী! কিছুই বুঝতে পারছি না। হোটেলের ঘরে টিভিটা সব সময় খুলে রেখেছি। যা জানার জানছি। তাতে দুশ্চিন্তাটা আরও জাঁকিয়ে বসছে।
তবে এ সবের মধ্যে একটা ভাল ভাবনাও ভাবার চেষ্টায় আছি। এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে তো ভরপুর রোমাঞ্চ রয়েছে, আপাতত সেটা অনুভব করার চেষ্টা করছি। অন্য আর কোনও উপায় নেই যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy