ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। —ফাইল চিত্র
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে রাজ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। শনিবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এই দাবি করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব দুষ্মন্ত নারিয়ালার সঙ্গে হওয়া ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের হাতে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য তুলে দিয়েছে রাজ্য। এ দিনই দিল্লিতে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় সাহায্যের বিষয়টি নিয়ে যথাস্থানে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে তিন জেলায় ৩৫ লক্ষ মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন। ৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৩৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১৪ লক্ষ ৯০ হাজার হেক্টর কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিকাঠামো ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও পরিস্রুত জল সরবরাহ করতে হচ্ছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে। দুষ্মন্ত নারিয়ালা জানান, সব মিলিয়ে ২৩ হাজার ৮১১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসেব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের একটি দল এ দিন হেলিকপ্টারে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণ করে। অপর দলটি সড়কপথে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ও পাথরপ্রতিমার পরিস্থিতি ঘুরে দেখে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সব তথ্য দিয়েছে। তাঁরা দিল্লি ফিরে রিপোর্ট দেবেন। এ বার দেখা যাক কেন্দ্র কত অর্থ বরাদ্দ করে।’’ সরকারি মহলের বক্তব্য, ২০১৫ সালের বন্যায় ১৭টি জেলা প্রভাবিত হয়েছিল। তখন ক্ষয়ক্ষতি বাবদ প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার দাবি জানিয়েছিল রাজ্য। কেন্দ্র দিয়েছিল ১১০০ কোটির কিছু বেশি। ফলে এ বারও রাজ্যের দাবি কেন্দ্র কতটা মানবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘আয়লার পরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এ বার। কেন্দ্রের তা বোঝা উচিত।’’
তবে এর মধ্যেই ত্রাণ বিলি নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি নয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বিজেপির সমর্থকদের বলে দেওয়া হচ্ছে, তোমাদের ত্রাণ দেব না।’’ তাঁর দাবি, ত্রাণ বিলির কাজ পঞ্চায়েতের হাতে রাখা যাবে না। এ কাজ সরকারি আধিকারিকদের দিয়ে করানো হোক।
দিলীপবাবু আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আকাশ থেকে দেখেছেন, ৫ লক্ষ বাড়ি ভেঙেছে। দুই ২৪ পরগনায় ৫ লক্ষ কাঁচা বাড়িই নেই। রাজ্যের তরফে দিল্লিতে বিপর্যয় মোকাবিলায় সংক্রান্ত বৈঠকে অন্য হিসেব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে যে টাকা চাওয়া হয়েছে, তা থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা কাটমানি রাখবে তৃণমূল। ওরা নির্বাচনের খরচ তুলতে চাইছে।’’ তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, ‘‘ওরা তো দল পাঠিয়েছে, নিজেরাই দেখুক।’’
অন্য দিকে, দিল্লিতে এ দিন সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। বৈঠকের শেষ লগ্নে তাতে যোগ দেন মোদী। বৈঠক শেষে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘দিদি কেমন আছেন?’’ সুদীপবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী ভাল আছেন। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ‘‘আমি দিদিকে (বুলবুল নিয়ে) ফোন করেছিলাম।’’ সুদীপবাবু বলেন, ‘‘তার ভাল প্রচার হয়েছে। কিন্তু যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না।’’ প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, ‘‘বিষয়টি যথাস্থানে আলোচনা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy