বুলবুলের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি।— ছবি: রণজিৎ নন্দী
১০ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন অনিলকুমার জানা। কাঁথি-৩ ব্লকের খারিজবাড় গ্রামের এই চাষি শনিবার সকাল থেকে ধান বাঁচাতে বারবার ছুটেছেন জমিতে। বিকেলে গিয়ে ধানগাছগুলো একসঙ্গে বেঁধেও দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি।
রবিবার সকালে দুর্যোগ কাটার পরে মাঠে গিয়ে অনিল দেখেন, ১০ বিঘা জমির গোটাটাই চলে গিয়েছে জলের তলায়। লোকসানের চোটে দিশাহারা এই চাষি বলছেন, ‘‘শিস বেরনোর পরে ধানগাছগুলো যাতে বাতাসে নুইয়ে না পড়ে তার জন্য কত কষ্ট করেছি। কিন্তু সবটাই জলে চলে গেল। এখন ভাবছি কী করে আমন চাষের খরচ তুলব।’’
মাথায় হাত রামনগরের খয়রাণ্ডা গ্রামের পানচাষি সুশীলকুমার শী-রও। ৫টি পান বরজের মালিক সুশীল শনিবার রাতে এগারোটা নাগাদ ঝড়ের দাপট কিছুটা কমার পরে বরজে ছুটেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নতুন যে সব পানের চারা লাগানো হয়েছিল, তত ক্ষণে সবটাই মাটিতে পড়ে গিয়েছে। এমনিতেই এ বার লাভ তেমন হচ্ছে না। তার উপর পানগাছের এমন অবস্থা দেখে সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।’’
বুলবুল আতঙ্কে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকার বহু বাসিন্দাই শনিবার সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। বুলবুল এই জেলায় সরাসরি আছড়ে পড়েনি। তবে ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির দাপটে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, ১২৫০টি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলবর্তী রামনগর-১, ২ ও কাঁথি-১, দেশপ্রাণ, কাঁথি-২, খেজুরি-১, ২ ব্লকে, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সব থেকে বেশি। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, তার ছিঁড়ে কাঁথি এবং দিঘা শহর ছাড়া অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকা বিদ্যুৎহীনও হয়ে পড়েছে। দুর্যোগে জেলায় তিন জনের মৃত্যুও হয়েছে। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘কাঁথি, রামনগর, খেজুরি ও নন্দীগ্রাম সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন ব্লক থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’
গত কয়েক দিন ধরেই জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় বুলবুল সতর্কতা জারি হয়েছিল। ঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২২ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরানো হয়েছিল। ফলে প্রাণহানি অনেকটাই এড়ানো গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। রবিবার সকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় ত্রাণ শিবির থেকে অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। হলদিয়া বন্দরেও এ দিন সকাল থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। তবে বন্দরে জাহাজ চলাচল শুরু হয় বিকেল পাঁচটার পরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy