আমপানে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ক্ষয়ক্ষতির বিশদ রিপোর্ট চাইলেন, তহবিল ঘোষণা করলেন, প্রতিটি পাই-পয়সা হিসেব করে খরচ করার নির্দেশ দিলেন। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন) যে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, তার মোকাবিলার প্রক্রিয়া এ ভাবেই শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও আমলাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা সামলাতে যে তহবিল ঘোষণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার মধ্যেই আমফানের প্রবল আঘাতে যে পরিস্থিতি তৈরি হল, তাতে কেন্দ্রের সাহায্য দরকার বলে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন। প্রধানমন্ত্রীকে পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার আহ্বানও জানালেন তিনি
উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, সে কথা বুধবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হলেই তিনি ওই দুই জেলা পরিদর্শনে যাবেন। ঘূর্ণিঝড় বেরিয়ে গেলেও দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, ফোন পরিষেবা প্রায় বিকল, অজস্র গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে রয়েছে প্রায় সর্বত্র। বিভিন্ন এলাকায় জল জমে মাঠ-ময়দান আর জলাশয়ের ফারাক বোঝা দুষ্কর হয়ে গিয়েছে বলে খবর। ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বর্ষণের কারণে মাটিও নরম হয়ে রয়েছে। তার মধ্যেই আকাশ মেঘে কালো এবং ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হেলিকপ্টার নিয়ে পরিদর্শনও প্রায় অসম্ভব। তাই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, আবহাওয়ার একটু উন্নতি হলে শনিবার তিনি পরিদর্শনে যেতে পারেন
নবান্নে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমফানের তাণ্ডবে রাজ্যে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে কলকাতাতেই ১৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে বলে তিনি জানান। উত্তর ২৪ পরগনায় প্রাণ গিয়েছে ১৭ জনের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর এলাকায় ৬, ডায়মন্ড হারবারে ৮ এবং সুন্দরবন এলাকা থেকে ৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে বলে তিনি জানান। পূর্ব মেদিনীপুরে ৬, হুগলির চন্দননগরে ২ এবং নদিয়ার রানাঘাটে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আমপানের তাণ্ডবে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেছেন।
আরও পড়ুন: ‘চাষের জমি গিলেছে নোনা জল, আমপানের পর ফিরে দেখি বাড়িটাও নেই’
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান। দ্রুত সে সমস্যা মেটানোর নির্দেশও দেন প্রশাসনকে। যে সব নদীবাঁধ এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোরও দ্রুত মেরামতির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘সারানো রাস্তা যেন তিন বছর স্থায়ী হয়, সেটা দেখতে হবে।’’
ত্রাণ ও পুনর্গঠনের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও রকম অনিয়ম বা অপব্যয় যে তিনি বরদাস্ত কবেন না, সে বার্তা এ দিন বেশ স্পষ্ট করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন প্রশাসনকে। তিনি বলেছেন, ‘‘দেখেশুনে টাকা খরচ করতে হবে। কোনও ভাবেই অকারণে টাকা খরচ করা যাবে না।’’ সে প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী জানান যে, করোনা মোকাবিলায় যে ২০০ কোটি টাকার তহবিল তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আমপানের ক্ষয়ক্ষতি মেটানোর জন্য হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করছেন বলেও তিনি জানান। তবে মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানান যে, দু’মাস ধরে লকডাউনের জেরে রাজ্যের আয় পুরোপুরি বন্ধ, হাতে কোনও টাকা নেই, এই হাজার কোটি টাকা জোগাড় করাও খুবই কঠিন। আমপানের তাণ্ডবে যা হল, তার ক্ষতিপূরণে কেন্দ্র সাহায্য করুক রাজ্যকে— দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি জানতে অমিত শাহই ফোন করেছিলেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। তবে আমপানের জেরে রাজ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, দেশের প্রধানমন্ত্রীর তা দেখে যাওয়া উচিত বলে মুখ্যমন্ত্রীর মত। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে এ দিন আহ্বানও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
আরও পড়ুন: আমপানে তছনছ বাংলা, মৃত অন্তত ৭২, ‘এসে দেখে যান’, মোদীকে বললেন মমতা
ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসেবের ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ ও পুনর্গঠন তহবিল ঘোষণ করেছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। আমপানের তাণ্ডবে কতটা ক্ষতি হল, তার বিশদ হিসেব পেতে আরও কয়েকটা দিন সময় লাগবে বলে জানা যাচ্ছে। কৃষি এবং উদ্যানপালন দফতরের কাছ থেকে এ দিন ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চেয়েছেন তিনি। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy