প্রতীকী ছবি।
মাথায় ছাদ জোগাতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আবাস প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আর কাটমানির ঘুঘু বেশি বাসা বাঁধছে সেখানেই। যেখানে যত বেশি পাকা ঘর, কাটমানি ঘিরে ক্ষোভ সেখানেই তত বেশি!
রাজ্যে প্রায় এক মাস ধরে রোজ বিক্ষোভ চলছে কাটমানি নিয়ে। এবং মানুষের সব চেয়ে বেশি ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকার অংশ জনপ্রতিনিধিরা কাটমানি হিসেবে দাবি করায়। তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে যে-সব জেলায় বেশি সংখ্যায় আবাস যোজনার বাড়ি হয়েছে, সেই সব জেলায় কাটমানি সংক্রান্ত বিক্ষোভও সব চেয়ে বেশি।
‘‘বোঝাই যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীরা মিথ্যা কথা বলছেন না। যত ঘর হয়েছে, সকলের কাছ থেকে টাকা তুলেছে তৃণমূল। বিক্ষোভের আঁচও সেই সব এলাকাতেই বেশি। এখন পাইপয়সা ফেরত দিতে হবে,’’ বলছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য পঞ্চায়েতে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি পরিকল্পনা করে বিক্ষোভ করাচ্ছে। কোথাও দু’-এক জন গোলমাল করে থাকলে সরাসরি অভিযোগ জানানোর কথা বলা হয়েছে। পুলিশে তো এফআইআর হয়নি। কিসের ভিত্তিতে বলব, ওই সব বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত?’’
সরকারি নথিপত্র অবশ্য বলছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় যে-সব এলাকায় বেশি বাড়ি হয়েছে, সেখানে কাটমানি সংক্রান্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভের সংখ্যা সমানুপাতিক। যেমন, হুগলিতে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ৬০ হাজার ৪৩৭টি বাড়ি তৈরি হয়েছে। হুগলি শিল্পাঞ্চলে গ্রামীণ আবাস যোজনার বাড়ি হয় না। ফলে আরামবাগ-সহ গ্রামীণ হুগলিতেই ৬০ হাজারের বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে। আর ১০ জুলাই পর্যন্ত হুগলিতে কাটমানি বিক্ষোভ হয়েছে ৩২টি। রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক।
একই ভাবে পূর্ব বর্ধমানে গ্রামীণ আবাস যোজনায় এক লক্ষ ছ’হাজার ২২৯টি বাড়ি তৈরি হয়েছে। ওই জেলায় কাটমানি-বিক্ষোভ হয়েছে ২৯টি। বীরভূমে আবাস যোজনায় এক লক্ষ ৩১ হাজার ৪৫৭টি বাড়ি তৈরি হয়েছে আর বিক্ষোভ হয়েছে ২৩টি। বাঁকুড়ায় বাড়ির সংখ্যা ৬৯ হাজার ২২৭ এবং বিক্ষোভের ঘটনা ২৪।
ব্যতিক্রমও রয়েছে। রাজ্যে গ্রামীণ আবাস যোজনায় সবচেয়ে বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। এক লক্ষ ৬৮ হাজার ৭৬৭টি বাড়ি তৈরি হলেও সেখানে বিক্ষোভের সংখ্যা মাত্র ১০। তা হলে কি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কাটমানির দাপট কম? সেখানে জেলা পরিষদের কর্তারা প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসেছেন। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহলে বিক্ষোভের ঘটনা কম। সেখানে কি কাটমানি নেওয়া হয়নি? পঞ্চায়েতকর্তারা জানান, রাজ্যের শাসক দল যে-সব এলাকায় হেরেছে, সেখানে বিক্ষোভের দাপট তুলনায় কম। কারণ, ভোটারদের মধ্যে শাসককে হারিয়ে তৃপ্তি লাভের ‘অনুভব’ আছে। কিন্তু যে-সব জায়গায় এ বারেও তৃণমূল জিতেছে, সেখানে কাটমানি সংক্রান্ত বিক্ষোভ যেন আর থামতেই চাইছে না। যেটাকে শাসকের পায়ের তলার মাটি আলগা হওয়ারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন পঞ্চায়েত ভবনের অনেক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy