দক্ষিণ কলকাতার একটি মণ্ডপে জমায়েত। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে অষ্টমীর অঞ্জলির পরে রাস্তাঘাট ছিল একটু ফাঁকা। তা হলে কি মহালয়া থেকে শুরু হওয়া মানুষের ঢল সপ্তমীর পর থেকে কমতে আরম্ভ করল?
সেই ধারণা ভেঙে গেল বিকেল ৫টার পরে। দক্ষিণের একডালিয়া, সুরুচি, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, সিংহি পার্ক, চেতলা, মুদিয়ালি, দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা থেকে শুরু করে উত্তরের হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয়, বাগবাজার, কুমারটুলি পার্ক— সর্বত্র মানুষের ভিড় সুনামির মতো আছড়ে পড়ল। শেষ রাতে এক পুলিশ কর্তা জানালেন, অষ্টমীর ভিড়ে উত্তরকে কিছুটা হলেও টেক্কা দিয়েছে দক্ষিণ।
কলকাতায় পুজো দেখার জন্য যেমন লোকাল ট্রেনে চেপে মানুষ পৌঁছেছেন, সে রকমই উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির প্রচুর মানুষ মেট্রো করে এসেছিলেন পুজো দেখতে। কলেজ স্কোয়্যারের মণ্ডপে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ দম্পতি জানালেন, করোনার জন্য চার বছর পরে তাঁরা ফের পুজো দেখতে ময়দানে নেমেছেন। পুজো দেখার সেই পুরনো মেজাজ ফিরে এসেছে বলে তাঁরা খুব খুশি।
শ্রীভূমির পুজো যেমন দেখা চাই, তেমনই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত-নিউজ়িল্যান্ডের খবরটাও চাই। তাই শ্রীভূমির লাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইলেই খেলার খবর নিচ্ছিলেন একদল তরুণ। জানালেন, রাতভর প্ল্যান আছে ঘোরার। প্রথমে উত্তর সেরে নিয়ে তার পরে দক্ষিণে হানা দেবেন তাঁরা। দক্ষিণে মুদিয়ালির মণ্ডপে ভিড় সামলানো এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘অষ্টমীর ভিড় সপ্তমীকে টেক্কা দিয়েছে। এখনও নবমীর রাত বাকি আছে। তবে মনে হচ্ছে এ বার সর্বোচ্চ ভিড়ের কাপ অষ্টমীর রাতই নিয়ে যাবে।’’
অষ্টমীর সকাল থেকে বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো দেখা এবং অঞ্জলি দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়ে। সন্ধ্যা আরতির সময়ে কার্যত তিল ধারণের জায়গা ছিল না মণ্ডপের সামনে। রাত বাড়লে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজো ভিড়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কি না, সেই নিয়ে এ দিন জল্পনা ছড়ায়। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বক্তব্য, ‘‘ওই মণ্ডপে দর্শকদের ঢোকা কোনও সময়েই বন্ধ করা হয়নি। ভিড় সামলাতে পুলিশ নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী বিভিন্ন গেট দিয়ে দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে ঢোকা-বেরোনোর ব্যবস্থা করেছে।’’ সিপি জানিয়েছেন, জনস্রোতের বহর বিবেচনায় রেখেই দু’জন অতিরিক্ত সিপি-সহ একাধিক পুলিশ-কর্তাকে সেখানে মোতায়েন রাখা হয়েছে। সিপি-র সংযোজন, ‘‘দর্শনার্থীদের বাধা সৃষ্টি বা পুজো কমিটির সঙ্গে অসহযোগিতার মনোভাব পুলিশের নেই। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। পুজো কমিটিকে অনুরোধ, পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। আমরাও তা-ই করব।’’
অষ্টমীর সকালে ছিল অঞ্জলি পর্ব। বেলা বাড়তেই কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ— জেলায় জেলায় দর্শনার্থীদের ঢল নামে। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ি চত্বরে বিকেল ৩টেতেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না৷ বিকেলে সন্ধিপুজোর জ্বলতে থাকা প্রদীপ দেখতে ভিড় হয় রাজবাড়ির পুজোয় এবং জলপাইগুড়ির রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে। রাজবাড়ির ভিড়ে দাঁড়িয়ে ভাস্কর সরকার বলেন, ‘‘প্রদীপ জ্বালানো দেখতেও লম্বা লাইন দেখছি। নতুন প্রজন্মের কাছে বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িও ট্রেন্ডিং।’’
ভিড় সামলাতে বিকেল থেকে শিলিগুড়ি শহরের প্রধান রাস্তা এবং মণ্ডপের কাছাকাছি রাস্তাগুলিতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দক্ষিণ দিনাজপুরের শহরগুলিতে ভিড়ের চাপে রাস্তায় যানবাহন চলার অবস্থা ছিল না। বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। একই ছবি মালদহের ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদহ এবং চাঁচলেও। উত্তর দিনাজপুরের বড় পুজো মণ্ডপগুলিতে দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। কোচবিহারের নিউটাউন ইউনিট থেকে শুরু করে ভেনাস স্কোয়্যার, সুভাষপল্লি, দক্ষিণ খাগরাবাড়ি, নাট্যসঙ্ঘ, বটতলা— সর্বত্রই ভিড় ছিল নজরে পড়ার মতো।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড় পুজোর মধ্যে ক্যানিংয়ের মিঠাখালি সর্বজনীন, ডায়মন্ড হারবারের নাইয়াপাড়া সর্বজনীন, বাসন্তীর চুনাখালি সর্বজনীনে বিকেল থেকেই লম্বা লাইন চোখে পড়ে। নবমী থেকে যে হেতু আবহাওয়ার অবনতি হওয়ার পূর্বাভাস, সে হেতু অষ্টমীতে সকলে বেরিয়ে পড়েন। বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার নিজেও বাইকে চেপে বিভিন্ন মণ্ডপে ঘোরেন, নজর রাখেন যাতে কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয়।।
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলাতেও ছিল জনস্রোত। অনেকে গাড়ি ভাড়া করে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে, হোটেল-রেস্তরাঁতেই দুপুরের খাওয়া সারেন। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে তমলুক, হলদিয়া থেকে এগরা— সব এলাকার মণ্ডপেই ছিল দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন। হুগলির কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠে এ দিন কুমারী পুজো উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার ভক্তের সমাগম হয়। বিকাল ৩টে থেকেই মানুষের ঢল দেখা যায় আরামবাগ শহরের পুজো মণ্ডপগুলিতে। দুপুর থেকেই শহরের অনেক রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া এবং উত্তরপাড়ায় বেশ কিছু বড় পুজো হয়। রাত যত বেড়েছে, বেড়েছে ভিড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy