অধিবেশন শেষে একে একে বিভিন্ন দলের নেতার নাম ডাকছেন স্পিকার। শাসক থেকে বিরোধী, এমনকী একমাত্র বিধায়ক যে দু’টি দলের, তাঁরাও প্রথামাফিক ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু ধন্যবাদ জানাতে উঠে দাঁড়ালেন না প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের কেউ! বিরোধী দলনেতা সভায় ছিলেন না সেই সময়। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে অন্য কোনও বিধায়ককেও অধিবেশন শেষের রেওয়াজ পালনের দায়িত্ব নিতে দেখা যায়নি। চার বছরে এই প্রথম বার!
ঘটনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার। কিন্তু তার অভিঘাতই এ বার প্রবল ভাবে পড়েছে বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলের মধ্যে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর থেকে সূর্যকান্ত মিশ্রের পক্ষে এখন আর বিরোধী দলনেতার কাজে বিশেষ সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাস্তবের সমস্যা বুঝে সূর্যবাবু নিজেই দলের পলিটব্যুরো এবং বাম বিধায়কদের কাছে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতার পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার। কারণ, একই সঙ্গে দু’টি দায়িত্বে একই রকম মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাদ সেধেছেন সিপিএম নেতৃত্ব এবং বাম বিধায়কেরাই! তাঁদের যুক্তি ছিল, চার বছর যখন কেটেই গেল, আর কয়েক মাসের জন্য নতুন কাউকে বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব দিয়ে লাভ নেই। বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন প্রয়োজনীয় ভূমিকা সূর্যবাবুই সামলে নিতে পারবেন। কিন্তু এ বারের অধিবেশনে সেই বিধায়কদেরই উপলব্ধি, সূর্যবাবু পুরোপুরি সময় দিতে না পারায় বাম শিবিরের মধ্যে সমন্বয়ের তাল কাটছে বারেবারেই!
সিপিএম সূত্রের খবর, সুর্যবাবু নিজেও বৃহস্পতিবারের ঘটনা জেনে বিস্মিত হয়েছেন! আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দিতে হবে বলে সে দিন অধিবেশন শেষ হওয়ার আগেই বিধানসভা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। বিরোধী দলনেতা উপস্থিত না থাকলে বিধানসভায় কাজ সামাল দেওয়ার অলিখিত দায়িত্ব এখন সিপিএম বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানের উপরে। কিন্তু অধিবেশনের শেষ দিন সূর্যবাবু চলে যাওয়ার পরে আনিসুরও সভায় যাননি! সভার মধ্যে তখন সিপিএমের অন্য বিধায়কেরা উপস্থিত থাকলেও তাঁদের কাউকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দায়িত্ব দেওয়া ছিল না। এমনকী, কেউ যে ধন্যবাদ-পর্বে বক্তৃতা করতে পারবেন না, সে কথা তাঁকেও জানানো হয়নি বলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।
শুধু অন্তিম লগ্নের ধন্যবাদ-পর্বই নয়, এ বার এক মাসের বেশি অধিবেশনে বারেবারেই বাম শিবিরের অন্দরে প্রকট হয়েছে সমন্বয়ের সমস্যা। কোনও দফতরের বাজেটের উপরে বক্তা ঠিক করা, কোনও জ্বলন্ত বিষয় সভায় উত্থাপন করা বা প্রস্তাব আনা নিয়ে তাল রাখতে বেশ কয়েক বার হোঁচট খেয়েছেন আনিসুর। শারীরিক ভাবে পূর্ণ সুস্থ নন ডোমকলের বিধায়ক। তা ছাড়া, সূর্যবাবুর রাজনৈতিক ওজনও তাঁর নেই বলে বাম বিধায়কদের একাংশের বক্তব্য। যার ফলে সূর্যবাবুর পরিবর্তে আনিসুরকে বিরোধী দলনেতার পদে আনার ভাবনাও এ বার ধাক্কা খেয়েছে। এক সিপিএম বিধায়কের কথায়, ‘‘পরীক্ষামূলক ভাবে সূর্যদা এ বার বেশির ভাগ বিষয়ে নিজেকে বক্তা তালিকায় রাখেননি। স্বরাষ্ট্র বাজেট, জমি বিলের উপরে প্রস্তাব এবং চিট ফান্ডের বিল— এই রকম কয়েকটি বিষয়েই নিজের বক্তব্য সীমিত রেখেছেন। কিন্তু বাম পরিষদীয় দলে অন্য কারও যে হেতু ওঁর মতো প্রভাব এখনও নেই, তাই সূর্যদা না থাকলেই আমাদের বেঞ্চ যেন ঝিমিয়ে পড়েছে!’’
সূর্যবাবুর স্বল্প উপস্থিতির মধ্যে বাম শিবিরের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বক্তা উদয়ন গুহ, আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর) বা নাজমুল হকেরাও এ বার যেন নিষ্প্রভ ছিলেন! দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান হওয়ার পরে উদয়নবাবু প্রত্যেক দিন বিধানসভাতেও আসতে পারেননি। তবে উদয়নবাবুর আক্ষেপ, ‘‘সব বিষয়ে বামফ্রন্টের সব দলকে বলতেই হবে, এমন প্রথা মেনে চলার তো কিছু নেই। প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কোনও বিষয়ে বামফ্রন্টের নানা দলের মধ্যে এক বা দু’জনকে বেছে নেওয়া হোক। কিন্তু সেই বোঝাপড়া এখনও গড়ে উঠল না!’’
সূর্যবাবু বা আনিসুর অবশ্য এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সমস্যা একটা হচ্ছে, বুঝতে পারছি। দেখা যাক, ভবিষ্যতে কিছু বিকল্প পাওয়া যায় কি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy