আর জি কর-কাণ্ড এবং নারী নির্যাতনের অন্যান্য ঘটনার প্রতিবাদে বাম কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল। পশ্চিম মেদিনীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে যে দুই দফতরের গাফিলতি সামনে এসেছে, সেই স্বাস্থ্য ও পুলিশ দফতরের মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ এবং কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলের অপসারণ চেয়ে শহরে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মহামিছিলের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট। তারই পাশাপাশি এ বার দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে গণ-আবেদন পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করল সিপিএম। জেলায় জেলায় দাবি সংবলিত বোর্ড, ফ্লেক্স টাঙিয়ে সই সংগ্রহ করা হবে। আর জি করের ঘটনায় তদন্তের ভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। সেই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভ-জমায়েতের প্রস্তুতি নিতেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমকে বার্তা দিয়েছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম শুক্রবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি রয়েছে ৫ সেপ্টেম্বর। কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট জোর করে আর জি কর মামলাকে নিজেদের কোলে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা চাই, নির্যাতিতার পরিবার সুবিচার পাক। তাই আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষের সই নিয়ে আদালতে পিটিশন জমা দেব, যাতে নারদ, সারদা, কামদুনি মামলার মতো এই মামলাও দীর্ঘসূত্রিতার জালে না জড়িয়ে পড়ে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা জানি, ‘জাস্টিস ডিলেড ইজ় জাস্টিস ডিনায়েড’। কিন্তু আবার মনে রাখতে হবে, ‘জাস্টিস হারিড ইজ় জাস্টিস বেরিড’!’’
আগামী ৩ তারিখের মিছিলে শামিল হওয়ার জন্য সব স্তরের মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। আহ্বান জানানো হচ্ছে বামফ্রন্টের বাইরের বিভিন্ন দলকেও। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি জগৎ থেকে যে প্রতিবাদ উঠে আসছে, তাকে স্বাগত জানিয়েই সেলিমের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে যাঁরা ভেবেছিলেন সরকার পরিবর্তন ইতিবাচক হবে, তাঁরাও এখন প্রতিবাদে মুখ খুলছেন। সমস্বরে বলছেন, যথেষ্ট হয়েছে! শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিদ্বজ্জনেরা প্রতিবাদে নামছেন। আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। এখনও যাঁরা মুখ খোলেননি, তাঁদের আহ্বান জানাব এগিয়ে আসার জন্য।’’ সম্প্রতি আর জি করে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বাম কর্মীদের কটূক্তির মুখে পড়েছিলেন পরিচালক অপর্মী সেন। সংস্কৃতি জগতের কারও কারও মুখ খোলা নিয়ে সমাজমাধ্যমেও বিরূপ মন্তব্য চলছে। এই পরিস্থিতিতে বাম কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পরামর্শ, ‘‘অতীতে বিরোধিতা করেছেন, এমন শিল্পী, অভিনেতারা যখন প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের স্বাগত জানানো উচিত। তৃণমূল-বিজেপির মেরুকরণ বজায় রাখার জন্য এই অংশকে অহেতুক আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা অন্যায়। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধ করব যে, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, অরিজিৎ সিংহ, সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব যখন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তখন অহেতুক তাঁদের সমালোচনা করবেন না।’’
আর জি করের ‘মাথা ধরো’র দাবিতে এ দিনই সন্ধ্যায় হাজরা মোড়ে অবস্থানে শামিল হয়েছিলেন সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের পুর-প্রতিনিধি মধুছন্দা দেব, দীপু দাসেরা।
সিবিআই এবং আইনের দোহাই দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এখন নজর ঘোরাতে চাইছেন বলে সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। বিধান ভবনে এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে এক দিকে কড়া আইন আনা এবং প্রধানমন্ত্রীকে পরপর চিঠি লিখে দেখাতে চাইছেন, তিনি কত সক্রিয়। আবার অন্য দিকে তাঁরই প্রশাসনের নানা বিভাগ তথ্য-প্রমাণ লোপাট করছে, যাতে সব অপরাধী ধরা না পড়ে। মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা এ সব!’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সিবিআই এসেছে মানে রাজ্য প্রশাসনের তদন্তের অধিকার চলে গিয়েছে, এমন তো নয়! মুখ্যমন্ত্রী যদি মনে করেন তাঁর পুলিশ অপরাধীদের সন্ধান জানে এবং ধরতে পারবে, তা হলে আদালতে গিয়ে জানাতেই পারেন। রাজ্যের তদন্তের জন্য সময় চাইতে পারেন।’’ পাশাপাশিই, কংগ্রেসের পুর-প্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকের মন্তব্য, ‘‘আর জি করে এত বড় ঘটনায় গোটা দেশ তোলপাড় কিন্তু উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদকে দেখা গেল না! মনে হচ্ছে, তিনি এবং তাঁর বিধায়ক-স্ত্রী মধুচন্দ্রিমায় বেরিয়েছেন!’’
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন মিছিল করেছেন শিয়ালদহের টাকি হাইজ ফর বয়েজের প্রাক্তনীরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, স্কুলের পরে মিছিল হয়েছে। প্রাক্তনীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থসারথি সাহা বলেন, ‘‘আমাদের এই মিছিল শুধু আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে নয়, দেশে ঘটে যাওয়া সমস্ত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy