রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ক্রমে সঙ্কুচিত হচ্ছে। সরকারি ক্ষেত্রে কমে আসছে নিয়োগও। এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা চালু করার দাবি তুলল সিপিএম। তাদের যুক্তি, তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে (ওবিসি) সংরক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হতে বসেছে অর্থনীতির ধারা বদলে যাওয়ায়। এই দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সিপিএমের।
দলের ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের আসরে সংরক্ষণের প্রশ্নে অভিনব প্রস্তাব নিয়েছে সিপিএম। সংরক্ষণের পরিধি বাড়ানোর দাবি তুলে ওই প্রস্তাব পেশ করেছেন বাংলা থেকে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম। যিনি নিজেই দলিত অংশের প্রতিনিধি এবং অনগ্রসরদের নিয়ে আন্দোলনের শরিক। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নয়ের দশকে দেশ উদার অর্থনীতির পথে হাঁটতে শুরু করার পর থেকেই বেসরকারি ক্ষেত্রের রমরমা বাড়ছে। যা আরও গতি পেয়েছে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর জমানায়। রেল-সহ নানা রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের পর থেকে কর্মী নিয়োগ কমে গিয়েছে প্রায় ৩৫%। ঠিকা বা চুক্তিতে কর্মী নিয়োগ বেড়ে গিয়েছে অনেক। রামচন্দ্রের কথায়, ‘‘জাতপাত ভিত্তিক বৈষম্য দূর করার কার্যকরী উপায় হিসেবে যে সংরক্ষণ চালু করা হয়েছিল, তার সুযোগই তো কমে যাচ্ছে। বেসরকারি হাতে থাকা সংগঠিত ক্ষেত্রে সংরক্ষণকে প্রসারিত করতে হবে এখন।’’
সিপিএমের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য বি ভি রাঘবুলুরও বক্তব্য, ‘‘সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগই তা প্রায় হচ্ছে না। অন্য দিকে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বেসরকারি হাতে চলে যাচ্ছে। তার ফলে মার খাচ্ছেন তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসি অংশের মানুষ।’’ আম জনতার ন্যূনতম চাহিদা পূরণকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দিতে হবে, কোনও অনুদান বা খয়রাতির ভরসায় ফেলে রাখা যাবে না, এই মর্মেও একটি প্রস্তাব এনেছেন রাঘবুলু।
সিপিএমের তরফে বলা হচ্ছে, বড় বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা সরকারের কাছ থেকে কম দামে জমি নেয় কিন্তু কর্মসংস্থানের সময়ে আর্থ-সামাজিক ভাবে দুর্বলদের গুরুত্ব দেয় না। রামচন্দ্রের দাবি, ‘‘বেসরকারি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। তার জন্য সংবিধানে কোনও সংশোধনী প্রয়োজন হলে সেটাও করতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)