শার্টের বাঁ-দিকের বুকপকেটের উপর দ্রোহের ব্যাজ সেঁটে আলিমুদ্দিনে হাজির সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
নির্দিষ্ট সময়েই শনিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে পৌঁছে গিয়েছিলেন মহিলা সাংবাদিককে ‘হেনস্থায়’ অভিযুক্ত সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। প্রায় দু’ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিপিএমের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি (আইসিসি)। শার্টের বাঁ-দিকের বুকে দ্রোহের ব্যাজ সেঁটে দলের কমিটির সামনে হাজিরা দিয়েছিলেন উত্তর দমদমের প্রাক্তন বিধায়ক। তাতে লেখা, ‘দ্রোহের উৎসবে তিলোত্তমার জন্য মগ্ন’।
সিপিএমের তদন্ত কমিটিতে তিন সদস্য শনিবার তন্ময়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁরা হলেন কমিটির চেয়ারপার্সন অঞ্জু কর, বীরভূমের নেত্রী শ্যামলী প্রধান এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা নদিয়ার জেলা সম্পাদক সুমিত দে। কমিটির সামনে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে তন্ময় আবার বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ আসলে ‘পরিকল্পিত কুৎসা’। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দলে সকলের কথা বলার সুযোগ রয়েছে। আমায় আইসিসি ডেকেছিল। আমায় তারা যা যা, যেমন যেমন জিজ্ঞাসা করেছে, বলেছি।’’
কী জানতে চাইল আইসিসি? এ ব্যাপারে তন্ময় কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি জানিয়েছেন, আইসিসি পার্টির অভ্যন্তরীণ কমিটি। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, তা তিনি প্রকাশ্যে বলবেন না। তবে সিপিএম সূত্রের খবর, প্রথমে তন্ময়কে নিয়মমাফিক আইসিসির হাজিরা খাতায় সই করতে হয়। তার পর একে একে সদস্যেরা সই করেন। এর পর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়, যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ওই তরুণী করেছিলেন, তা ঘটেছে কি না। তন্ময় স্পষ্টই জানিয়ে দেন, ওই রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি! এর পরে এক মহিলা সদস্য তন্ময়ের কাছ থেকে জানতে চান সে দিনের ঘটনাক্রম। সেই প্রশ্নে তন্ময় সময় উল্লেখ করে জানিয়েছেন, কখন ওই সাংবাদিক এবং তাঁর সহকর্মী চিত্রসাংবাদিক তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন। তার পর কী এবং কত ক্ষণ কথা হয়। আইসিসির এক সদস্যের কথায়, ‘‘তন্ময়ের থেকে যা যা জানতে চেয়েছিলাম, সবই তিনি বলেছেন।’’ তন্ময়ের কথার মাঝে কোনও পাল্টা প্রশ্ন (ক্রস কোয়েশ্চেন) করা হয়নি। তবে কোনও প্রসঙ্গ শেষ করার পর সে ব্যাপারে আরও বিশদে জানতে প্রশ্ন করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, তন্ময় আইসিসির কাছে অনুরোধ করেছেন, বিষয়টি যাতে দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করা হয়। সিপিএমও চাইছে দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে। কারণ, এখন দলের সম্মেলন প্রক্রিয়া চলছে। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে তন্ময়ের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাসপেনশনের কারণে তা হচ্ছে না। আলিমুদ্দিন চাইছে, জেলা সম্মেলনের আগেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হোক। তন্ময়-ঘনিষ্ঠদেরও বক্তব্য, আইসিসি-র সদস্যদের মনোভাবকে তন্ময় ‘ইতিবাচক’ ভাবেই দেখছেন। কেউ কোনও ‘ধারণার বশবর্তী’ হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, এমন তন্ময়ের মনে হয়নি।
তন্ময়কে জিজ্ঞাসাবাদের পরে আইসিসির অন্যতম সদস্য সুমিত বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে তন্ময়কে ডেকে কথা বলেছি। এর পর আমরা নিজেরা বসে পরবর্তী প্রক্রিয়া ঠিক করব।’’ তবে শনিবার তন্ময়কে জানানো হয়নি, তাঁকে আবার আইসিসি ডাকবে কি না। সুমিত জানিয়েছেন, যে মহিলা সাংবাদিক তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তাঁর সঙ্গেও আইসিসি কথা বলার চেষ্টা করবে। যদিও তিনি সিপিএমের কাঠামোর কেউ নন। ফলে সিপিএম ডাকলে তিনি যে যাবেনই, এমন ‘নিশ্চয়তা’ নেই। আবার এ-ও ঘটনা যে, তিনিই অভিযোগ করেছিলেন ফেসবুকে ‘লাইভ’ করে। পরে তিনি থানাতেও অভিযোগ করেন। সেই ‘লাইভ’ নিয়ে বিতর্ক তৈরির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তন্ময়কে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সংশ্লিষ্ট আরও কয়েক জনের সঙ্গে সিপিএমের আইসিসি কথা বলতে চায়। তাঁরা সমাজমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। পারিপার্শ্বিক আরও কিছু তথ্যও খতিয়ে দেখছে আইসিসি। তার মধ্যে রয়েছে এক প্রাক্তন সাংবাদিকের সমাজমাধ্যমের পোস্টও।
দলের তদন্ত কমিটির পাশাপাশি পুলিশি তদন্তের মুখোমুখিও হচ্ছেন তন্ময়। বরাহনগর থানায় ওই মহিলা সাংবাদিক তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ইতিমধ্যে থানা থেকে দু’বার তলব করা হয়েছে তন্ময়কে। প্রতি বারই তিনি হাজিরা দিয়েছেন। প্রথম দিন তিন ঘণ্টা, পর দিন প্রায় দেড় ঘণ্টা থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তন্ময়কে। তবে শনিবার প্রথম বার জন্য নিজের দলের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হলেন সাতষট্টি বছরের তন্ময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy