মুজফফর আহমেদের (কাকাবাবু) জন্মদিনে সিপিমের সভা। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি-বিরোধিতার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতির কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে দলের দলিলে। ‘বিজেমূলের’ মতো কিছু স্লোগান বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল বলেও কবুল করেছেন দলের নেতারা। কিন্তু এ সবের অর্থ রাজ্যে তৃণমূলের প্রতি ‘নরম’ মনোভাব নেওয়া নয়, এ বার তা স্পষ্ট করে দিল সিপিএম। মুজফ্ফর আহমেদের (কাকাবাবু) ১৩৩তম জন্মদিন পালনের মঞ্চ থেকে সিপিএম নেতৃত্বের বার্তা, বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই মতাদর্শগত। জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে বিরোধী ঐক্যে তাঁরা থাকবেন। কিন্তু রাজ্যে যারা বিজেপি ও তৃণমূল, দু’দলেরই বিরুদ্ধে, তাদের একজোট করার লক্ষ্যে দলের কাজ চলবে। নির্বাচনে পরাজয় মানে এই রাজনৈতিক লক্ষ্য থেকে সরে আসা নয়— বুঝিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিধানসভা ভোটে এ বার বামেদের বিপর্যয়ের পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাকাবাবুর জন্মদিন উপলক্ষে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের সভাই ছিল সিপিএমের প্রথম প্রকাশ্য সমাবেশ। সেখােন সিপিএমের তিন পলিটবুরো সদস্য বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র ও মহম্মদ সেলিম বার্তা দেন, কঠিন সময়ে আরও দৃঢ়তা নিয়ে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে হবে কমিউনিস্ট কর্মীদের। তরুণ প্রজন্মের বড় অংশ এই দুর্দিনেও ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’-সহ নানা জনসেবামূলক কাজে আসছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে যোগ্য কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির ‘বাস্তবতা’ ব্যাখ্যা করেছেন বিমানবাবুরা।
দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু বলেন, ‘‘সারা দেশে সব বিরোধী একজোট হচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে। সেটা ভাল উদ্যোগ। জাতীয় স্তরে এমন ঐক্য হলেও আঞ্চলিক দলগুলোর আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে।’’ সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘পরাজিত আমরা হয়েছি। কিন্তু যে ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে বাংলায় নির্বাচন করেছি, সেটা ঠিক। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়তে চান, তাঁদের একজোট হতে হবে। তৃণমূলের প্রতি যাঁরা নরম মনোভাবের কথা বলছেন, তাঁরা শাসক দলের বিরুদ্ধে থাকা ক্ষোভের উপাদানগুলিকে অস্বীকার করছেন।’’ বিজেপি-বিরোধিতার নামে তৃণমূলের ‘অন্যায়’ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলে তাতে বিজেপির দিকেই বেশি পরিসর চলে যাবে বলে আশঙ্কা সিপিএমের।
পরিস্থিতির নিরিখে জনপরিসর থেকেই কথ্য কিছু রাজনৈতিক শব্দ বা স্লোগান উঠে আসে, দলে আলোচনা করে সে সব ঠিক হয় না,— এই ব্যাখ্যাও উঠেছে সভায়। সেলিমের উদাহরণ, ‘‘সত্তরের দশকে বাংলায় ‘কংশাল’ কথাটা চালু হয়। তার মানে কি কংগ্রেস আর নকশাল এক ছিল? সুকুমার রায় ‘বকচ্ছপ’ বা ‘হাঁসজারু’র কথা লিখেছিলেন। বক আর কচ্ছপ কি কখনও এক হতে পারে? একটা বিশেষ পরিস্থিতি বোঝাতে এমন শব্দের প্রচলন হয়।’’ সামাজিক মাধ্যমে তৈরি ‘বিজেমূল’ সিপিএমের প্রচারে উঠে এলেও বিজেপি ও তৃণমূলকে তাঁরা এক করে দেখেন না বলেই সেলিম, বিমানবাবুদের বক্তব্য। তাঁরা মনে করান, আরএসএস-পরিচালিত বিজেপির সমতুল কোনও রাজনৈতিক দলই নয়, এই উপলব্ধিও বাংলায় ভোটে হেরে তাঁদের হয়নি। আগে থেকেই সেটা ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy