Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
CPM

CPM: মামলার ভয় ছেড়ে আন্দোলন চাই, ত্রুটি মেনেই বার্তা সিপিএমে

প্রবীণ বাম নেতাদের অনেকেই মনে করেন, বামফ্রন্ট দীর্ঘ দিন সরকারে থাকার ফলে রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের সাহসে ‘জং’ ধরেছে নেতা-কর্মীদের!

দুর্বল ছিল আন্দোলন

দুর্বল ছিল আন্দোলন —প্রতীকী চিত্র।

 সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২১ ০৫:২৭
Share: Save:

ভোটে তৃণমূলের লাগাতার সাফল্যের পাশাপাশি রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে গত কয়েক বছরে উঠে এসেছে বিজেপি। বিরোধী পরিসরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বামেরা। এ বার দলের সাংগঠনিক পর্যালোচনা রিপোর্টে সিপিএম কবুল করে নিল, বিরোধী শক্তি হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে তাদের দুর্বলতা রয়েছে বিপুল। ক্ষমতা থেকে চলে গেলেও দল চলছে ‘যান্ত্রিক’ ভাবে। আসন্ন সম্মেলন-পর্বে সাংগঠনিক ত্রুটি-বিচ্যুতি সারিয়ে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর দিকেই নজর দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতিতে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বিগত বৈঠকে এক দিকে যেমন সম্মেলনের জন্য রূপরেখা ঠিক করে দিয়ে নোট তৈরি করা হয়েছে, তার পাশাপাশিই সাংগঠনিক অবস্থার ময়না তদন্ত করা হয়েছে। সেই পর্যালোচনা রিপোর্টেই ধরা পড়েছে সংগঠন ও আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুতর ত্রুটির কথা। আন্দোলনের বিষয় নির্বাচনে দুর্বলতার জন্য দায়ী করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকেই। জেলা স্তরে নেতাদের পশ্চাদপদ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে বেশি করে সময় দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।

রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক পর্যালোচনা রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে যে, বিগত ১০ বছর আমরা রাজ্যের সরকারে নেই। অথচ আমাদের চলার আগেকার পদ্ধতি বহু ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত হয়নি। বিরোধী দল হিসাবে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা রয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনের কর্মসূগুলি অনেক সময়ে যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। শ্রমিক মহল্লা ও বস্তি, খেতমজুর-দিনমজুর এলাকা, মধ্যবিত্ত প্রধান এলাকা— এই ভাবে প্রতিটি এলাকার নির্দিষ্ট সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে আন্দোলন গড়ে তোলার দক্ষতা সংশ্লিষ্ট পার্টি নেতৃত্বকে অর্জন করতে হবে’। দলিত, জনজাতি, পিছিয়ে পড়া এলাকার সমস্যাগুলিও চিহ্নিত করা এবং জনতার আলাদা অংশের দাবি বেছে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য গণফ্রন্টগুলিকে বিশেষ দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।

প্রবীণ বাম নেতাদের অনেকেই মনে করেন, বামফ্রন্ট দীর্ঘ দিন সরকারে থাকার ফলে রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের সাহসে ‘জং’ ধরেছে নেতা-কর্মীদের! আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের মার ও চাপের মুখে পড়ার ঝুঁকি এখন আর অনেকেই নিতে চান না। এ বারের রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক রিপোর্টেও ধরা পড়েছে সেই সুর। প্রচারমুখী আন্দোলনের পাশাপাশি ‘আদায়যোগ্য’ দাবির ভিত্তিতে আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে: ‘তার জন্য মিথ্যা মামলা, দীর্ঘ কারাবাসও ঘটতে পারে। এর কোনওটাই আমাদের অজানা নয়। আত্মপ্রত্যয় নিয়েই আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের পথে অগ্রসর হতে হবে’।

সিপিএমের বক্তব্য, শহর-গ্রামে, মধ্যবিত্ত এলাকায় ক্লাব-সহ বিভিন্ন সংস্থা বহু দিন ধরে জনগণের ‘নিজস্ব সংস্থা’ হিসেবে রয়েছে। অতীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভূমিকার ফলেই বহু এলাকায় এই ধরনের সংস্থা, সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ক্ষেত্রগুলিতে বামেরা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তাই রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে— ‘এলাকার জনসাধারণের মধ্যে তাদেরই এক জন, এই পরিচয় পার্টি সদস্যদের গড়ে তোলা খুবই জরুরি। পার্টি ও গণফ্রন্টের কার্যধারায় এই বিষয়টি বিশেষ ভাবে জোর পাওয়া প্রয়োজন’। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের আক্ষেপ, ‘‘বামফ্রন্ট ভাবতেই পারেনি, ১৯৭৭ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে সরকার হবে! বিরোধী পক্ষ হিসেবে আন্দোলনে বামেদের ভূমিকা দেখেই মানুষ আস্থা রেখেছিলেন। অথচ এখন বিরোধী আসনে যাওয়ার এত দিন পরেও আন্দোলনের দুর্বলতা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM organisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy