Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘জয় শ্রীরাম’-এর ঠাট্টা, বামের শাস্তি বহিষ্কার

তালপুকুরে ঘটি ডোবে না। মেজাজ তবু আছে রাজার মতোই! ঠাট্টা আর সত্যি ঘোষণার ফারাক ধরতে না পেরে বর্ধমান সিপিএম তাই সটান বহিষ্কারের চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে দলের এক সক্রিয়, তরুণী কর্মীকে!

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১৪:৪০
Share: Save:

তালপুকুরে ঘটি ডোবে না। মেজাজ তবু আছে রাজার মতোই! ঠাট্টা আর সত্যি ঘোষণার ফারাক ধরতে না পেরে বর্ধমান সিপিএম তাই সটান বহিষ্কারের চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে দলের এক সক্রিয়, তরুণী কর্মীকে!

রসিকতাকে যে তাঁরা ‘সিরিয়াস’ ভেবে নিয়েছেন, বিতর্ক বাধার পরে এ বার উপলব্ধি হয়েছে সিপিএম নেতৃত্বের। কিন্তু তির তো বেরিয়ে গিয়েছে! তা হলে কী করণীয়? দলের অন্দরের আদালত কন্ট্রোল কমিশনে এর পরে আবেদন করতে হবে ওই কর্মীকে। সেখানেও ফয়সালা না হলে সুপ্রিম কোর্ট অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল কমিশনের হস্তক্ষেপ লাগবে। লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিয়ে ফেলার পরে এখন বিচার ঘোরানোর হ্যাপা বিস্তর! এবং এ সবই হচ্ছে আতঙ্কের জেরে দড়িকেও সাপ ভেবে ফেলার জেরে!

নিছক ‘এপ্রিল ফুলে’র মজা করার জন্য বর্ধমানের সুপ্তি কাঞ্জিলাল সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন— বিজেপি-তে যাচ্ছি! জয় শ্রীরাম! সঙ্গে স্মাইলি। বর্ধমান শহরের ১ নম্বর লোকাল কমিটির অধীনে ৮ নম্বর শাখার সদস্যা সুপ্তি সিপিএমের দুর্দিনে দলে এসে রাস্তায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট সক্রিয়। সেই সুপ্তির জবানিতে ‘জয় শ্রীরাম’ শুনেই লোকাল কমিটির সম্পাদক তাঁকে শো-কজের চিঠি পাঠান। উত্তরে সুপ্তি লেখেন, ওটা মজা ছিল। রসিকতা ধরতে পারার মতো বিচক্ষণতা তিনি ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে আশা করেছিলেন।

যে বর্ধমানে সিপিএম নেতাদের দাপটে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেতো বছরের পর বছর, তাঁদের বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন! পত্রপাঠ জোনাল কমিটির বৈঠক ডেকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৯ নং ধারার ১৩ নং উপধারায় সুপ্তিকে বহিষ্কার করে দিয়েছেন নেতারা। সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে বর্ধমান জেলা কমিটিও। বর্ধমান শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক তাপস সরকারের যুক্তি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই পোস্ট গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দলের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের অবস্থানের সঙ্গে ভিন্ন মত প্রকাশ্যে আনা যাবে না বলে যে নির্দেশিকা সম্প্রতি সিপিএমের সর্বস্তরে জারি হয়েছে, তারই প্রথম প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন তাপসবাবুরা।

সুপ্তি এখন কী করবেন? তিনি বলছেন, ‘‘আমি অন্য দলে যাব না। কন্ট্রোল কমিশনে আবেদন করব।’’ তাঁর আক্ষেপ, বিতর্ক হতে পারে বুঝে তাঁর বন্ধুরা ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেছিলেন। তিনি তা-ই করেছিলেন। মুছে ফেলার কথা পার্টি নেতৃত্বকে জানিয়েওছিলেন। তবু শাস্তির খাঁড়া ঠেকানো যায়নি!

এখন খাঁড়ার ধার কমাতে কিছু করবেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব? সোশ্যাল মিডিয়ার নির্দেশিকা তৈরির সময়ে বিশেষ ভূমিকা ছিল পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমের। রায়গঞ্জে পুরভোটের প্রচারের ফাঁকে বর্ধমানের খবর পেয়ে তিনি বলছেন, ‘‘আমি সবে শুনলাম। খোঁজ নেব। রাজ্য পার্টির এটা বিবেচনা করা উচিত।’’ দলেরই একাংশ বলছে, তরুণ মুখের আকাল যাদের ভোগাচ্ছে, তারা এমন পান থেকে চুন খসলেই খড়গহস্ত হয়ে উঠলে বিবেচনা তো করতেই হবে! আর বিজেপি-র রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য সুযোগ পেয়ে কটাক্ষ করছেন, ‘‘শুধু রামেই এত আতঙ্ক! পঞ্চায়েত ভোটে চক্র হাতে কৃষ্ণ এলে তখন কী হবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM Sarcasm Young Leader BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE