ফাইল চিত্র।
নব পর্যায়ে করোনার বাড়বাড়ন্ত চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে এবং শুধু ছাত্রসমাজ নয়, আমজনতাকেও সতর্কতার বিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে অক্ষরে অক্ষরে। তবে স্কুলগুলিতে আলাদা ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ বা স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোনও সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার এখনই নিচ্ছে না বলে শুক্রবার স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘স্কুলে আলাদা ভাবে কোনও বিধিনিষেধ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা পাইনি আমরা। স্কুলশিক্ষা দফতর নিজেরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। স্বাস্থ্য দফতর যদি কোনও নির্দেশিকা দেয়, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ শিক্ষক শিবির তো বটেই, অভিভাবকদেরও একটি বড় অংশ চাইছেন, খোলা থাকুক স্কুল। কারণ, প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যে পড়াশোনার যে-ক্ষতি হয়েছে, তা কার্যত অপূরণীয় বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এখন প্রয়োজনে বিধিনিষেধ আরোপ করেও স্কুলে পঠনপাঠন চালু রাখতে চান তাঁরা।
কিন্তু অতিমারির বিধি পালনের বিষয়টিও পড়েছে প্রশ্নের মুখে। স্কুলের ভিতরে বিধিনিষেধ থাকলেও বাইরে তার দেখা নেই বলে অভিযোগ উঠছে প্রতিনিয়ত। এবং বহির্জগতে এ শ্রেণির মানুষের বেপরোয়া আচরণের প্রভাব পড়ুয়াদের মনেও পড়ছে বলে শিক্ষা শিবির থেকে সচেতন সামাজিক বর্গের পর্যবেক্ষণ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের প্রশ্ন, ‘‘রাস্তাঘাটে, বাসে-ট্রেনে কোথাও তো কেউ মাস্ক পরছে না। তা হলে স্কুলে এসে আমরা মাস্ক পরব কেন?’’ এই প্রশ্ন শুনে রীতিমতো বিব্রত বোধ করছেন স্কুলশিক্ষকেরা। কারণ, এর উত্তর যেমন তাঁদের জানা নেই, তেমনই এর প্রতিকার করাও তাঁদের কর্ম নয়। শুধু মাস্ক পরে থাকার বিষয়টিই নয়, বার বার হাত ধোয়া বা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলছে অনেক পড়ুয়া। তাদের প্রশ্ন, বাইরে কোথাও করোনা বিধি মানা হচ্ছে না কেন? অনেকে ছুটির পরে স্কুল থেকে বেরিয়েই মাস্ক খুলে ফেলছে।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, পড়ুয়াদের সচেতন করতে গেলে স্কুলের বাইরেও সকলকে সমান ভাবে সতর্কতা-সচেতনতার প্রমাণ দিতে হবে। যাতে শিক্ষার্থী সমাজের কাছে দৃশ্যতই আদর্শ স্থাপন করা যায়। সমাজের সর্বস্তরে করোনা বিধি যাতে মেনে চলা হয়, তার জন্য যথাসম্ভব কঠোর হতে হবে সরকারকে।
নদিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক অজয়কুমার বিশ্বাস জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুলে ঢোকার সময় থার্মাল গান দিয়ে প্রত্যেক পড়ুয়ার শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তারা মাস্ক পরছে কি না, দফায় দফায় হাত ধুচ্ছে কি না, টিফিন ভাগ করে খাচ্ছে কি না— সব দিকেই লক্ষ রাখা হচ্ছে। কিন্তু তারা স্কুল থেকে বেরোনো মাত্রই উধাও হয়ে যাচ্ছে সেই সচেতনতা। ‘‘কারণ, বাইরে কোনও সচেতনতা নেই। তাই স্কুলের বাইরে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য আমরা স্কুলেরই একটি দল তৈরি করেছি,’’ বলেন অজয়বাবু।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘোলার একটি স্কুলের শিক্ষক বিপ্লব দাস জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়ার সংখ্যা কমবেশি আড়াই হাজার। যতটা সম্ভব করোনা বিধি মেনে চলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু স্কুল থেকে বেরোলে সেটুকুও কেউ মানছে না। প্রশ্ন উঠছে, অভিভাবকেরা এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন তো? ওই শিক্ষক বলেন, “অনেক পড়ুয়ার মা-বাবাকে দেখি, সন্তানদের স্কুলে দিতে আসার সময় তাঁদের মুখেও মাস্ক নেই।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের স্কুলশিক্ষক উদয়শঙ্কর মণ্ডলের বক্তব্য, পড়ুয়াদের মধ্যে করোনা নিয়ে ভয়ভীতি অনেকটাই কেটে গিয়েছে। তারা মনে করছে, কমে গিয়েছে সংক্রমণ। তাই কেউ মাস্ক পরছে না। এটা যে কতটা ভুল, তাঁদের তরফে সেটা পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা চলেছে পদে পদে।
শিক্ষকদের মতে, এই অসতর্কতা, এই সচেতনতাহীন অবস্থা চলতে থাকলে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ যেমন বাড়তে পারে, একই ভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা শিক্ষকদেরও। বেশ কিছু স্কুল জানায়, করোনা সংক্রমণের ফলে হাজিরা কমছে শিক্ষকদেরও। নিজের বা বাড়ির লোকের করোনা উপসর্গ দেখা দিলেই শিক্ষকেরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কোয়রান্টিন লিভও মিলছে। ফলে পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।
যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, ‘‘জ্বর, সর্দি-কাশি বা এই ধরনের উপসর্গের দরুন স্কুলে শিক্ষকদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেক গিয়েছে। এটা চলতে থাকলে এক সময় ক্লাস নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। ফলে স্কুলে এবং স্কুলের বাইরে সব জায়গাতেই সতর্কতা ও সচেতনতা খুব দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy