জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল ছবি।
রেশন দুর্নীতি মামলায় আবার সক্রিয় হল ইডি। এই মামলায় নতুন করে তিন জনকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি সূত্রে খবর, ধৃতদের মধ্যে দু’জন মিলের মালিক। অন্য এক জন রেশন মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কোম্পানির চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেড (সিএ) ছিলেন। এক বছর আগে তাঁদের তিন জনের বাড়ি, অফিস, মিলে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। তার পর থেকেই তাঁরা তদন্তকারীদের আতশকাচের নীচে ছিলেন। তবে এক বছর পর তাঁদের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত।
রেশন মামলায় সোমবার রাতে হিতেশ চন্দক, সুব্রত ঘোষ এবং শান্তনু ভট্টাচার্য নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতারির পর মঙ্গলবার বিচার ভবনে ইডির বিশেষ আদালতে তাঁদের হাজির করানো হয়েছিল। সেখানেই বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়ে ইডি। আদালতে ইডি জানায় ধৃতদের মধ্যে হিতেশ রাইস মিলের মালিক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভুয়ো কৃষকের নাম ব্যবহার করে টাকা নয়ছয় করেছেন তিনি। এক বছর আগে তাঁর মিলে তল্লাশিও চালানো হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ইডির উদ্দেশে বিচারকের প্রশ্ন, ‘‘এক বছর আগে তল্লাশি হয়েছে, বয়ান নেওয়া হয়ে থাকলে এত দিন পর গ্রেফতার করলেন কেন?’’ সেই প্রশ্নের জবাবে ইডি জানায়, এই সময়ের মধ্যে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আরও লোকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে ‘অ্যাডজুডিকেটিং অথরিটি’কে জানানো হয়। একই সঙ্গে দুর্নীতির টাকা আরও কোথায় কোথায় ছড়িয়ে আছে, সেই সব দেখা হচ্ছিল।
হিতেশের মতো সুব্রতও এক মিলের মালিক। নবদ্বীপ পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে তাঁর। সুব্রতের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল পুলিশ। দুর্নীতির টাকা কোথায় গিয়েছে, তা জানতে সুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন করে ইডি। তবে শুনানিতে সুব্রতের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, এক বছর আগে তাঁর মক্কেলের বাড়ি, অফিসে তল্লাশি করেছিল ইডি। এমনকি তাঁকে ইডি দফতরেও ডাকা হয়। তখন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে এক বছর দু’মাস পর কোনও কারণ ছাড়াই কেন সুব্রতকে গ্রেফতার করা হল? তা শুনে বিচারক বলেন, ‘‘সঙ্গত প্রশ্ন।’’ আইনজীবীর সুরেই বিচারপতি ইডির থেকে জানতে চান, ‘‘এত দিনে আপনারা চার্জশিট দিয়েছেন। তাতে সুব্রতের নাম অভিযুক্ত হিসাবে ছিল না। হঠাৎ গ্রেফতার করলেন। কিন্তু এত দেরি কেন?’’ ইডির আইনজীবী জানান, তল্লাশি করে কী কী পাওয়া গিয়ে তা আদালতে জানাতে পারেন তারা। বিচারক সে বিষয়ে জানতে চান।
অন্য দিকে, ধৃত শান্তনুর সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের সরাসরি যোগ রয়েছে বলে দাবি করে ইডি। তিনি জ্যোতিপ্রিয়ের সিএ ছিলেন। বকলমে বালুর সাতটি সংস্থার আর্থিক বিষয় দেখভাল করতেন তিনি। ইতিমধ্যেই এই মামলায় ইডি আদালতে জানিয়েছিল, বালুর সঙ্গে সম্পর্কিত সাতটি সংস্থার হদিস পাওয়া গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সেই সংস্থার মাধ্যমেই দুর্নীতির টাকা লেনদেন হত। শান্তনুর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয় চিকিৎসাধীন থাকাকালীন একটি ঘটনার উল্লেখও করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর জ্যোতিপ্রিয়কে রেশন মামলায় গ্রেফতার করেছিল ইডি। গ্রেফতারির পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বেশ কয়েক দিন এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি রাখা হয়েছিল। ওই সময়ে ইডি একটি চিরকুট উদ্ধার করে। অভিযোগ, মেয়েকে হাসপাতালে বসে চিঠি লিখেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। সেই চিঠি ইডির হাতে পৌঁছয়। তাতে টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য লেখা ছিল বলে দাবি করে ইডি। মঙ্গলবার আদালতে ইডি জানায় সেই চিঠির সঙ্গে শান্তনু যোগ রয়েছে।
তবে শান্তনুর আইনজীবী আদালতে জানান, গত একবছরে ৩০ বার ইডি অফিসে ডেকে জেরা করা হয়েছে তাঁর মক্কেলকে। তার পরও এক বছর পর হেফাজতে নিয়ে তাঁকে জেরা করার দরকার কেন মনে হল ইডির? অন্য কাউকে আটকাতেই কি শান্তনুকে গ্রেফতার করা হল, প্রশ্ন তাঁর আইনজীবীর। যদিও ইডি দাবি করেছে, জেরায় শান্তনু জানিয়েছেন দুর্নীতির টাকা অন্য জনকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তিন জনকেই হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy