Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
SSC Recruitment

SSC Recruitment: নিয়োগ দুর্নীতিতে শিক্ষকও কমছে, আশা শুধু ঋণের কার্ড

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা ব্যাঙ্কগুলিকে স্পষ্ট জানিয়েছি, অহেতুক গড়িমসি না করতে। কারণ এ ক্ষেত্রে সরকার নিজে গ্যারান্টার।’’                                   

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২২ ০৫:৪০
Share: Save:

এক দিকে জনহিতকর প্রকল্প, অন্য দিকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। তৃতীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের এক বছরের রিপোর্ট কার্ডে এটাই নির্যাস।

এ বারে শিক্ষামন্ত্রী বদলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে ব্যাটন ফের ব্রাত্য বসুকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও নিয়োগজনিত অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার পথ মেলেনি। এর কিছু তদন্তে সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছে হাই কোর্ট। এর মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নতুন করে নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কারণ, রাজ্যে বহু স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। তবে এ সবের পাশাপাশি নতুন করে আশা জাগিয়েছে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’। পড়ুয়াদের এই ঋণের কার্ড অনেক পড়ুয়ারই উচ্চ শিক্ষার দরজা খুলে দেবে বলে বিশ্বাস শিক্ষকমহলের।

গত বছর যখন বিধানসভা ভোটের ফল বার হয়, গোটা দেশের সঙ্গে এই রাজ্যেও তখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষা দফতরের দায়িত্বে ফেরালেন ব্রাত্যকে। এরই মধ্যে হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই তদন্তের দায়িত্ব তুলে দিলেন সিবিআইয়ের হাতে। এমনকি, নিয়োগ দুর্নীতির সেই ঘটনায় ভূতপূর্ব শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামও জড়িয়েছে। তবে ডিভিশন বেঞ্চ আপাতত সেই নির্দেশে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু শেষমেশ জল কোন দিকে গড়াবে তা এখনও অজানা।

শিক্ষামহলের একাংশের বক্তব্য, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে টানাপড়েনেই দীর্ঘ দিন স্কুলে নিয়োগ কার্যত বন্ধ। তাতে শিক্ষক কমেছে বহু স্কুলে। বস্তুত, দু’টি বিষয়কে আলাদা করা কঠিন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন সরকারের ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পে শিক্ষকদের বাড়ির কাছে বদলির বিষয়টি। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে রাজ্যের স্কুল শিক্ষকদের জন্য ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পটি ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা চাইলে নিজের জেলায় বাড়ির কাছে বদলির আবেদন করতে পারেন। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের বদলির ফলে রাজ্য জুড়ে স্কুলগুলিতে শিক্ষক-ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গ্রামাঞ্চল, বিশেষ করে জঙ্গলমহল, পাহাড়, সাগর— এই সব অঞ্চলের স্কুলে শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে। বদলি প্রক্রিয়াতেও দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে।’’ এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক বদলির উৎসশ্রী প্রকল্পকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়ায় স্কুল গুলি শিক্ষকহীনতায় ধুঁকছে।’’ শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা কালে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকার সমস্যা। রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকায় স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়েছে— এ কথা মেনে নিচ্ছেন শিক্ষাজগতের অনেকেই। নতুন ভাবে স্কুল খোলার পরে আচমকা দীর্ঘ গরমের ছুটি এই সমস্যায় আরও ঘি ঢালবে বলেই আশঙ্কা। পড়াশোনায় যে ক্ষতি হয়েছে, সে কথা অস্বীকার করছেন না শিক্ষামন্ত্রীও। সম্প্রতি কলকাতায় এক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, বাকি বিশ্বের মতো এই রাজ্যের শিক্ষা পরিস্থিতিও করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষতি মিটিয়ে নতুন করে শিক্ষাব্যবস্থা উজ্জীবিত হচ্ছে। যদিও আচমকা লম্বা ছুটির ঘোষণার ফলে তা ফের বিঘ্নিত হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষামহলের একাংশ।

আরও একটি বিষয়েও রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর উদ্যোগী হয়েছে। তা হল কেন্দ্রীয় ভাবে কলেজে ভর্তি। বছরের পর বছর এ রাজ্যে কলেজে ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
যেখানে নাম জড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট শাসকদলের ছাত্র সংগঠনগুলির। কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা বড় পদক্ষেপ হবে, মানছেন বিরোধীরাও।

এই সবের মধ্যে সামান্য রুপোলি রেখা পড়ুয়াদের ঋণ কার্ড। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া ঋণ চেয়ে আবেদন করেছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার পড়ুয়া ঋণ পেয়েছেন। ঋণ দেওয়ার পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। যথাযথভাবে ঋণদান প্রক্রিয়া চললে শীঘ্রই তা ১০০০ কোটিতে পৌঁছতে পারে বলে সরকারি সূত্রের দাবি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচ হাজার পড়ুয়াকে ঋণ কার্ড দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের ঝলক দেখে ভাল লেগেছিল। এই ক্রেডিট কার্ড পেয়ে ওরা বুঝেছে, উচ্চ শিক্ষা ওদের কাছে আর অধরা নয়।’’

যদিও এ ক্ষেত্রেও ছোট ‘কিন্তু’ রয়ে গিয়েছে। ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সব ব্যাঙ্ক সমান ভাবে সাড়া দেয়নি। রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই নিয়ে বারবার বলার পরে পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি বলেই প্রশাসনের একটি মহলের দাবি। সম্প্রতি ব্যাঙ্কগুলিকে আবারও অনুরোধ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা ব্যাঙ্কগুলিকে স্পষ্ট জানিয়েছি, অহেতুক গড়িমসি না করতে। কারণ এ ক্ষেত্রে সরকার নিজে গ্যারান্টার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

SSC Recruitment Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy