পুলিশ-প্রশাসনে দুর্নীতির জেরে বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা, আদালতে এমনই মন্তব্য করলেন বিচারকেরা। সম্প্রতি ইটভাটা সংক্রান্ত একটি মামলায় উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে আইনজীবী অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার জন্য আরও কিছু সময় দাবি করলে পরিবেশ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় এবং পি এস মিশ্র প্রশাসনকে ভর্ৎসনা করে বলেন, ভূমি দফতর ও পুলিশের অবৈধ ইটভাটায় তদন্ত করতে যাওয়া মানে তো সেখান থেকে বন্ধ খাম নিয়ে ফিরে আসা। এর পরেই আদালত অবৈধ ইটভাটাগুলিকে বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। কী পদক্ষেপ করল প্রশাসন, তার রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার দিনও নির্দিষ্ট করে দেয়।
আদালতে পুলিশ-প্রশাসনকে এ ভাবে দুর্নীতির অভিযোগে তিরস্কার বিরল। ইটভাটার উপর নজরদারিতে প্রশাসন কতখানি শিথিল, আর তার সুযোগ নিয়ে বেআইনি ইটভাটা কী বিপুল ভাবে ছেয়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায়, তা ক্রমশ স্পষ্ট হওয়ায় আদালতও কড়া অবস্থান নিয়েছে। হলফনামায় অস্পষ্ট তথ্য দেওয়ার জন্য গত মাসে আদালত মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে। সম্প্রতি সে টাকা জমা করেছেন ওই জেলাশাসক।
গত নভেম্বরে চুঁচুড়ার আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিবেশ আদালতে পূর্ব ভারত শাখায় আবেদন করে জানতে চান, বেআইনি ভাটা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনগুলি কী কী করছে। এর প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে জেলাশাসকরা অবৈধ ইটভাটা নিয়ে যে হলফনামা জমা দিচ্ছেন, তাতে এই প্রথম সামনে আসছে অবৈধ ইটভাটার ব্যাপকতা। যেমন মুর্শিদাবাদে জেলাশাসক জানিয়েছেন, সেই জেলায় মাত্র ২৭টি ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র রয়েছে, ৩৩০টির নেই। মাত্র ১৯টা তাঁরা বন্ধ করতে পেরেছেন। বীরভূমে ২৫৪টি বেআইনি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ২৫টি বন্ধ করা হয়েছে। বর্ধমান দাবি করেছে, ৮২১টি বেআইনি ইটভাটার মধ্যে ৫২৬টা তারা বন্ধ করতে পেরেছে।
এই বিপুল সংখ্যক ইটভাটা কী করে এত দিন জেলায় কাজ করে যাচ্ছিল? পশ্চিম মেদিনীপুরে বৈধ ভাটার সংখ্যা মাত্র ৭, অবৈধ ২০৫। বাঁকুড়ায় বৈধ ভাটা ১২, অবৈধ ৩২৫। পূর্ব মেদিনীপুরে অবৈধ ভাটা ৩২৬। হাওড়া, হুগলি, নদিয়ার মতো কয়েকটি জেলা এখনও হলফনামা জমা দেয়নি। কী বলছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ? চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ইটভাটা অনুমোদনের জন্য আবেদন না করলে তাদের বিষয়ে আমরা জানব কী করে? অবৈধ ভাটাগুলি অনুমোদনের তোয়াক্কাই করে না।’’ কল্যাণবাবুর মতে, ইটভাটা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে যদি তা কৃষিজমির উপরের স্তর থেকে মাটি নিয়ে ইট তৈরি করে, অথবা যদি নদীখাতে বাধা তৈরি করে পলিমাটি সংগ্রহ করে। সমস্যার একটি সমাধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন ফ্লাই অ্যাশ থেকে ইট তৈরি করা। কিন্তু স্থলপথে ফ্লাই অ্যাশ পরিবহণের খরচ বেশি, এই কারণ দর্শিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন ভাটা মালিকরা।
কেন আইন ভেঙে কাজ করছে ইটভাটাগুলি? বেঙ্গল ব্রিকফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন নেই, এমন কোনও ইটভাটাকে আমরা কখনওই সমর্থন করি না। লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে সরকারও গড়িমসি করছে।’’ তিনি জানান, জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র মিললে দূষণ পর্ষদেআবেদন করা যায়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কাছেই থমকে থাকে আবেদন। ‘‘পরিবেশ আদালতে এ বিষয়ে আমরাও আমাদের বক্তব্য জানাব,’’ বলেন উত্তমবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy