অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছেন সেলিনা। নিজস্ব চিত্র
করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনার নির্দেশ, এখনই রোগীকে নিয়ে যেতে হবে কোভিড হাসপাতালে। কিন্তু নিয়ে যাবে কে? হেমতাবাদ ব্লকের রণহাট্টা এলাকার করোনা রোগীকে আট কিলোমিটার দূরে কর্ণজোড়ার হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি নন কোনও অ্যাম্বুল্যান্সচালক। তা হলে উপায়? এগিয়ে এলেন সেলিনা বেগম। শনিবার ২৬ বছরের তরুণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অ্যাম্বুল্যান্সে করে কোভিড হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন রোগীকে। তার আগে-পরে অবশ্য যাবতীয় সুরক্ষা বিধি মেনে ব্যবস্থা নিয়েছেন। নিজে পরেছেন পিপিই। ফিরে এসে স্যানিটাইজ় করেছেন অ্যাম্বুল্যান্স। রবিবার মাতৃদিবসে কর্তব্যপরায়ণ মনোভাবকে সম্মান জানালেন হেমতাবাদ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
সেলিনা কিন্তু এ দিনও নির্বিকার। বললেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সচালক হিসেবে আমি নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।’’ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে তত ক্ষণে তিনি বসে গিয়েছেন অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের আসনে। মুখ ঢাকা মাস্কে। অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে তখনও স্যানিটাইজ়ারের গন্ধ।
সেলিনার বাবা নাজিরুদ্দিন আহমেদ অন্যের জমিতে চাষ করতেন। ভাগচাষির কপালে জুটত খোরাকি আর মজুরি। তা-ই দিয়ে কোনও ক্রমে সংসার চলত। মা সাজেদা বেগম এবং দিদি কোহিনুর বাড়ির কাজেই ব্যস্ত থাকেন। আড়াই বছর আগে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন নাজিরুদ্দিন। কাজ চলে যায়। তার পর থেকে তিনি বাড়িতেই। তাঁর পরিবার ও পরিজন সূত্রে জানা যায়, সেলিনার দাদারা কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন না। তাই এই অবস্থায় সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে সেলিনার কাঁধে। সেই সময়ে জেলার ন’টি ব্লকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাহায্যে মহিলাদের গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানেই অন্যদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন সেলিনাও। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর কাজটা জুটে যায় তখন।’’ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অ্যাম্বুল্যান্স চালান তিনি। মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকা রোজগার হয়ে যায়। তা-ই দিয়ে সংসার টানেন সেলিনা।
আরও পড়ুন: বেশি মিউটেশনেই কি মৃত্যু বেশি কলকাতায়
সেলিনার কথায়, ‘‘করোনা আবহে সংক্রমণের আতঙ্কে জেলার বহু অ্যাম্বুল্যান্সচালক গত দেড় মাস ধরে অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছেন না। আমি কাজ বন্ধ করিনি। বরং সতর্ক হয়ে মাস্ক, টুপি ও গ্লাভস পরে রোগীদের কখনও কোয়রান্টিন, আবার কখনও রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজেও পৌঁছে দিচ্ছি।’’ এর জন্য দেড় মাস ধরে বাড়ি ফিরছেন না, পাছে অসুস্থ বাবার কোনও সমস্যা হয়!
আরও পড়ুন: লোক নেই, মেডিক্যালে পিপিই পরে দাদার দেহ মর্গে নিতে হল ভাইকে!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy