Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Cornea

শূন্য কর্নিয়ার ভাণ্ডার, আলো কাড়ছে কোভিড

কোভিড কেড়ে নিচ্ছে এমন অসংখ্য দৃষ্টি। একটা সময়ে যার ফল মারাত্মক হবে, মত চিকিৎসকদের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০৯
Share: Save:

লকডাউনে মুর্শিদাবাদ থেকে ব্যারাকপুরের বেসরকারি চোখের হাসপাতালে এসেছিলেন মনোরঞ্জন মণ্ডল। আঘাত থেকে চোখে সংক্রমণ ছড়ানোয় কর্নিয়া প্রতিস্থাপন জরুরি ছিল। ওই হাসপাতালের আই ব্যাঙ্কে কর্নিয়া টিসু না থাকায় দৃষ্টি হারান তিনি।

ধানের শিসের খোঁচায় ক্ষতিগ্রস্ত কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করাতে না-পেরে আর আই ও-তে (রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি, কলকাতা) প্রতীক্ষায় আছেন মেদিনীপুরের বেলদার এক বাসিন্দা।

কোভিড কেড়ে নিচ্ছে এমন অসংখ্য দৃষ্টি। একটা সময়ে যার ফল মারাত্মক হবে, মত চিকিৎসকদের। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের বাধায় কোভিডের ভূমিকা কী? স্বাভাবিক সময়ে চক্ষুদানের অঙ্গীকার করা ব্যক্তির হাসপাতাল বা বাড়িতে মৃত্যু হলে খবর দেওয়া হয় আই ব্যাঙ্কে। মৃতের চোখ সংগ্রহের উপযুক্ত থাকলে এবং নির্দিষ্ট কিছু অসুখ যদি না থাকে তখন তা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কালেকশন সেন্টার। অঙ্গীকার করা না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে পরিজনেরাই আই ব্যাঙ্কে খবর দেন বা হাসপাতাল থেকে খবর পেলে পরিবারকে বোঝান ব্যাঙ্কের গ্রিফ কাউন্সেলর। কোভিড পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে সেই পরিকাঠামো। হাসপাতালগুলি নন-কোভিড রোগীর মৃত্যুর খবরই দিচ্ছে না ব্যাঙ্ককে। অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, প্রবল চাপে কম স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে এই দায়িত্ব পালন অসম্ভব। বাড়িতে কারও মৃত্যু হলে কোভিড রিপোর্ট থাকা আবশ্যিক। লকডাউনের প্রথম তিন মাসে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই বাড়ি থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ ছিল ব্যাঙ্কগুলির ভরসা। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে রাজ্যকে পাঠানো কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা। যার ১১ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, যে কোনও পরিস্থিতিতে

(নন-কোভিড রোগীর ক্ষেত্রেও) বাড়ি থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ বন্ধ রাখতে। যা সম্প্রতি পেরোনো ‘জাতীয় চক্ষুদান পক্ষকাল’ পালনের তাৎপর্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

রাজ্যের দু’টি সরকারি আই ব্যাঙ্ক আর আই ও এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অতুল বল্লভ আই ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার এখন শূন্য। চলতি বছরেই উত্তরবঙ্গে তৃতীয় সরকারি আই ব্যাঙ্ক তৈরি হলেও কাজ শুরু হয়নি। বেসরকারি আই ব্যাঙ্কের মধ্যে অন্যতম দিশা আই হাসপাতালের প্রভা আই ব্যাঙ্ক এবং শঙ্কর নেত্রালয়ের আই ব্যাঙ্কে অল্প টিসু রয়েছে।

দিশা আই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস ভট্টাচার্য বলছেন, “টিসুর অভাবে আমাদের হাসপাতালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন স্বাভাবিক সময়ের দশ শতাংশেরও কম হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতাল ও পরিবারের কাছে অনুরোধ, নন-কোভিড মৃত্যুর খবর আই ব্যাঙ্কে দিন।”

আর আই ও-র ডিরেক্টর অসীম ঘোষের কথায়, “আমাদের এখন টিসুই নেই। এমনিতেই সরকারি আই ব্যাঙ্কে গ্রিফ কাউন্সেলর না থাকা পরিষেবা বাড়ানোর বাধা। সরকারকে বলেও কিছু হয়নি। তার মধ্যে এই পরিস্থিতি ভয়াবহ।”

চিকিৎসকদের মতে, ছানি, রেটিনোপ্যাথি, গ্লকোমা, কর্নিয়ার অস্বচ্ছতা ও অপটিক নার্ভ নষ্ট হওয়া অন্ধত্বের কারণ। এর মধ্যে টিসু প্রতিস্থাপন করে দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব শুধুমাত্র কর্নিয়ার অস্বচ্ছতায়। ভিটামিন এ-র অভাব, মণিতে সংক্রমণ, আঘাত এবং জন্মগত কারণে অস্বচ্ছতা হয়। যার চিকিৎসায় অপটিক্যাল কেরাটোপ্লাস্টি (কর্নিয়া প্রতিস্থাপন) অথবা থেরাপিউটিক কেরাটোপ্লাস্টি (গলে যাওয়া মণির ক্ষেত্রে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করে চোখ নষ্ট হওয়া ঠেকানো হয়। পরে অপটিক্যাল কেরাটোপ্লাস্টির মাধ্যমে দৃষ্টি ফেরে) হয়।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলছেন, “একটি কর্নিয়া টিসু থেকে সর্বাধিক তিন জন রোগীর চিকিৎসা সম্ভব। হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীর মৃত্যু হলে পরিজনেরাই খবর দিন আই ব্যাঙ্কে। আপনার প্রিয়জনের কর্নিয়ায় একাধিক মানুষ দৃষ্টি পাবেন, সেটা ভুলে যাবেন না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Cornea Pandemic Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE