ভিড়: অনুমতি মিলতেই খুলেছে একটি মন্দির। যদিও মানা হচ্ছে না দূরত্ব-বিধি। শনিবার, মানিকতলার মুরারিপুকুরে। নিজস্ব চিত্র
পাল্টে যাচ্ছে বহু বছরের অভ্যাস। কোভিড-আতঙ্কের আবহে ধর্মস্থান খোলা হলেও বাঙালির অতি পরিচিত উপাসনালয়েও দর্শন বা প্রার্থনার চিরাচরিত নিয়ম পাল্টে যেতে পারে।
বরাবরের মতো সমস্ত ভক্তের জন্য দ্বার অবারিত থাকার সম্ভাবনা এখন কম। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও করোনা-প্রতিরোধে পারস্পরিক দূরত্ব-বিধির কথা মাথায় রেখেই ভক্তদের স্বাগত জানানোর কথা ভাবছে ধর্মস্থানগুলির বড় অংশ।
কর্পোরেট অফিসের ঢঙে ধর্মস্থানে ঢুকতে গেলেও হয়তো এ বার শরীরের তাপমাত্রা জরিপ বা থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে। এই ধরনের আয়োজনে আপস করে অনেকেই ধর্মকর্ম চালানোর পক্ষপাতী নন। যেমন, বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছেন, ১৫ জুনের আগে মঠ খোলার প্রশ্ন নেই। কামারপুকুর, জয়রামবাটীও সেই পথে হাঁটছে। মাহেশের ৬২৪ বছরের রথও এ বার পথে নামবে না। বদলে সংক্ষিপ্ত আচারে ধর্মরক্ষা হবে। রমজান মাসের তারাবির নমাজ বা ইদের নমাজ কার্যত বিচ্ছিন্ন ভাবে বাড়িতেই নিভৃতে সম্পন্ন করা হয়েছিল। বেশির ভাগ মসজিদ কর্তৃপক্ষ এখনই ভিড় চান না। নাখোদা মসজিদের ইমাম শাফিক কাশমি সতর্কতা-বিধির উপরে জোর দিচ্ছেন। ‘বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়াও লিখিত বার্তায় ইমামদের মসজিদে তিন-চার জন মিলে জামাত চালু রাখার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি আরও কিছু দিন বন্ধ থাকলে ক্ষতি নেই।” মুর্শিদাবাদের ছ’হাজার মসজিদে নমাজে দূরত্ব-বিধি রাখার বার্তা গিয়েছে। মালদহের সুজাপুরে নয়মৌজা ইদগাহ কমিটির সম্পাদক হামেদুর রহমান বিশ্বাসও বলেন, “মসজিদের বদলে বাড়িতে নমাজ পড়ার বার্তা দিচ্ছি।”
নবদ্বীপ, মায়াপুরের নামী মন্দিরগুলিও খুলছে না। দক্ষিণেশ্বর বা তারাপীঠে অপেক্ষা স্যানিটাইজ়েশন চ্যানেল তৈরির। কালীঘাট মন্দির কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সতর্কতা মেনে মন্দির খোলার বিষয়ে আলোচনা করছেন। দক্ষিণেশ্বরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী জানিয়েছেন সময় নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ত্রিস্তর সুরক্ষা-বিধি মেনে মন্দির খোলার পরিকল্পনা। তাঁর কথায়, “মন্দিরের চাতালে বসে ধ্যান, পঞ্চবটীতে বিশ্রাম, শ্রীরামকৃষ্ণ বা মায়ের ঘরে বসে থাকা বন্ধ থাকবে। দ্রুত দর্শন ও মন্দির পরিক্রমার বিধি চালু হবে। কপালে টিকার বদলে প্যাকেটে ভরে মায়ের সিঁদুর হাতে দেওয়া হবে।”
অতিমারির জন্য ভ্যাটিকানের পোপ গির্জায় জিশু-মেরির মূর্তি বা ক্রুশ চুম্বনের রীতি ভুলতে বলেছিলেন। ইস্টারের আগে কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজ়া বা কলকাতা ডায়োসিসের বিশপ পরিতোষ ক্যানিংও গির্জা বন্ধ রাখার পথে হাঁটেন। বিশপ ক্যানিং এখন বলছেন, “গির্জার ধর্মযাজক, কর্মচারীদের নিয়েই তো দশ জন হয়ে যাবে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কথা মানলে এখন গির্জা না-খোলাই ভাল।” কাল, সোমবার ব্যান্ডেল চার্চ খোলার কথা। কলকাতায় রোমান ক্যাথলিকদের আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজা সতর্কতা মেনে সর্বাধিক দশ জনকে নিয়েই গির্জা খোলার পক্ষপাতী।
দরজা খুললেও দূর থেকেই দর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দির কর্তৃপক্ষ। কল্যাণেশ্বরী মন্দির কর্তৃপক্ষ চান, দর্শনার্থীদের মাস্ক, দস্তানা পরা আবশ্যক। বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে জীবাণুনাশক ছড়ানোর ধুম। কালনার ১০৮ শিবমন্দির কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশ ছাড়া মন্দির খুলতে চান না। কলকাতার গুরুদ্বারগুলি সতর্কতা-বিধি মেনে খোলার কথা বললেও ট্রাকচালকদের ভিড় এড়াতে হাসিমারার গুরুদ্বার দরজা বন্ধ রাখারই পক্ষপাতী।
কোচবিহারের মদনমোহন বা মেদিনীপুরের বর্গভীমা মন্দির খোলার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জলপাইগুড়ির জল্পেশ মন্দির বা দক্ষিণ দিনাজপুরে তপনের রাধাগোবিন্দ মন্দির সতর্কতা-বিধি মেনে খুলবে। তবে পাড়ার ছোট মন্দিরে বিধি কত দূর মানা সম্ভব, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy