আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে অকুতোভয় তিন বাইক আরোহী। বৃহস্পতিবার।—ছবি সুমন বল্লভ।
লকডাউন? ঠিক বলছেন? রাস্তায় দাঁড়িয়ে এমন কথা শোনা গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ঘাটাল-দাসপুর থেকে উত্তরবঙ্গের ইংরেজবাজার বা শিলিগুড়িতেও। এর মধ্যে শিলিগুড়িতে পুলিশ পথে নেমে প্রচার এবং ধরপাকড় চালানোয় কিছুটা সংযত হয়েছে মানুষ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই সব জায়গায় কনটেনমেন্ট জ়োনে লোকজনের পথে বার হওয়ার প্রবণতা খুব একটা কমেনি বলেই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন।
যেমন, মালদহের ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভা। এই জেলায় দ্রুত হারে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সাড়ে ন’শোয় পৌঁছে গিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি অংশের আশঙ্কা, এক দু’দিনের মধ্যে জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এই পরিস্থিতি সামলাতে দুই পুরসভা এলাকাতেই দুপুর দু’টোর পরে কন্টেনমেন্ট জ়োনে পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। টোটো, অটো, ই-রিকশা— নয়া লকডাউনে এই তিনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, অলিগলি থেকে শুরু করে শহরের রাজপথে যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না-মেনেই চলছে সে সব। ট্র্যাফিক পুলিশের সামনে সরকারি, বেসরকারি বাসে যাত্রীদের ওঠানামা চলেছে। যদিও এ দিনও লাঠি হাতে টহল দিয়েছে পুলিশ, অনিয়ম দেখলে কড়াও হয়েছে। ব্যারিকেড করা হয়েছে বিভিন্ন রাস্তায়। ইংরেজবাজার থানার পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শহরবাসীর একাংশ নিজেদের ভালটা বুঝতে চাইছেন না। তাই পুলিশকে লাঠি হাতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে।” মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “শহরবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি পুলিশি টহলদারিও চালানো হচ্ছে।”
উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ শহর শিলিগুড়িতে এ দিন এলাকাভিত্তিক পূর্ণ লকডাউনে পুলিশকে টহল দিতে দেখা গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দোকান খোলা রাখার প্রবণতাও ছিল এ দিন। ৫টা থেকে লকডাউন চালু হয়। বেশ কিছু জায়গায় ৭টা, সাড়ে ৭টায় গিয়ে পুলিশ দোকানপাট বন্ধ করেছে। যে ওয়ার্ডগুলিতে সংক্রমণের হার বেশি, তার মধ্যে ৪৬ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে সন্ধ্যা হতেই প্রধান রাস্তায় পথবাতি বন্ধ করে দিয়ে টহল শুরু করে পুলিশ। লোক ও গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশ কমিশনার ত্রিপুরারি অথর্ব বলেন, ‘‘প্রতিটি থানাকে কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
একই প্রবণতা দেখা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল-দাসপুরের কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতেও। এ দিন বিকেল ৫টার পরে এই জায়গাগুলিতে ঘুরে বোঝাই গেল না, ৫টার পরে পূর্ণ লকডাউন শুরু হয়েছে। খড়্গপুর শহরেও বিকেল ৫টার পরে লকডাউন বিধি কার্যকরে তেমন কড়াকড়ি দেখা যায়নি। দিনভর শহরে ঘুরেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র।
তাঁকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীদের। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘শুক্রবার সকাল থেকেই আমরা প্রতিটি কন্টেনমেন্ট জ়োনে কড়া ভাবে লকডাউন বিধি কার্যকর করব।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে বড়বাজার, পুর দফতর সংলগ্ন এলাকা ও অন্য গণ্ডিবদ্ধ এলাকাতেও তেমন কড়াকড়ি নজরে পড়েনি। তুলনামূলক ভাবে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটে সচেতনতা বেশি নজরে পড়েছে।
মুর্শিদাবাদে যে চারটি এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন, তার মধ্যে শুধু হরিহরপাড়ার শ্রীপুর এলাকায় লকডাউন মানা হচ্ছে। বাকি জায়গাগুলিতে ভিড়ভাট্টায় বিশেষ প্রভাব পড়েনি। সন্ধ্যায় পুলিশ কিছুটা কড়াকড়ি শুরু করে। নদিয়ারও বিভিন্ন কন্টেনমেন্ট জ়োনে ব্যারিকেড লাগানো হয়, জারি হয় বিধিনিষেধ। তবে জেলা সদর কৃষ্ণনগর শহরে এর প্রভাব বিশেষ নজরে পড়েনি। পূর্ব বর্ধমানে বৃহস্পতিবার বিকেলে লকডাউন শুরুর পরেও কন্টেনমেন্ট জ়োনে অনেককে রাস্তায় দেখা গিয়েছে। যদিও পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কড়া ভাবে লকডাউন মানা হবে। কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাসিন্দাদের যাতে খাদ্যসামগ্রী পেতে অসুবিধা না হয়, তা দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy