পিটার সি ডোয়ার্টি
গত জুলাই মাসে, করোনার বাড়বাড়ন্ত যখন তুঙ্গে, তখন আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পিটার সি ডোয়ার্টি বলেছিলেন, ‘আগে থেকে দিনক্ষণ বলে প্রতিষেধক বাজারে আনা যায় না।’ তার পরে ন’মাস কেটেছে। বাজারে এখন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক মজুত। কিন্তু হুঁশ ফেরেনি সাধারণ মানুষের। শুধু প্রতিষেধক কতটা বাঁচাতে পারে এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে? আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে ডোয়ার্টির সঙ্গে কথা বললেন দেবাশিস ঘড়াই।
প্রশ্ন: করোনা সংক্রমণের পরে এক বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু এখনও এই অতিমারি কী ভাবে থামবে, তা থেকে বেরোনোর পথ খুঁজে পাওয়া গেল না!
পিটার সি ডোয়ার্টি: তা ঠিক। তবে গবেষণা তো চলছে। গবেষণার মাধ্যমেই সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সম্পর্কে আরও অনেক নতুন তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। তবে একটা বিষয় ভুললে চলবে না যে, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং এইচআইভি সম্পর্কেও জানতে অনেক বছর সময় লেগেছে। সেখানে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের চরিত্র ও ধরন অনেক জটিল। ফলে এই
ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের আরও জানা বাকি রয়েছে।
প্রশ্ন: গত ১৪ জানুয়ারি-১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, আন্তর্জাতিক সমীক্ষক দল চিনের উহানে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। যে সমীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ‘জ়ুনোটিক’ উৎস চিহ্নিত করা এবং কোন পথে তা মানবজগতের (হিউম্যান পপুলশেন) মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, তা বোঝা।
উত্তর: হ্যাঁ। কিন্তু সেই রিপোর্টের পরেও তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সম্পর্কে আরও তথ্য-সমীক্ষার দরকার রয়েছে। কারণ, কোনও একক সমীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমণের এই জটিল গতিপথ বোঝা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: এর আগের সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, ‘দিনক্ষণ বলে প্রতিষেধক বাজারে আনা যায় না।’ এই মুহূর্তে সারা বিশ্বেই একাধিক প্রতিষেধক বাজারে এসেছে। কিন্তু তার পরেও তো করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
উত্তর: যে কোনও অতিমারির ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ফলাফলে পৌঁছনোটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া সংক্রমণ কতটা ছড়াবে এবং কত দিন ধরে থাকবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে ঠিক মতো নিয়ম-বিধি পালনের উপরে। যদি নিয়ম-বিধি পালন করা না হয়, তা হলে শুধু প্রতিষেধক নিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল।
প্রশ্ন: কিন্তু প্রতিষেধক নেওয়ার পরে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বা পুনরায় সংক্রমিত হচ্ছেন, এমন ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে। ফলে এই মুহূর্তে কোন বিষয়ের উপরে সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার?
উত্তর: এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিষেধক সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার তৈরির উপরে।
প্রশ্ন: যেমন...
উত্তর: যেমন প্রতিষেধকের প্রথম শট দেওয়া হয়েছে না বুস্টার শট (যে শটটি প্রথম শটের পরবর্তী সময়ে দেওয়া হয়।) দেওয়া হয়েছে। প্রতিষেধক দেওয়া ও সংক্রমিত হওয়ার মধ্যবর্তী সময় কতটা। পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি কি পরীক্ষিত? আর প্রতিষেধক নেওয়ার পরে অসুস্থ হলে, সেই অসুস্থতার মাত্রা কত, সে সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। না হলে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও ফলাফলে পৌঁছনো বা মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও মাস্ক বা করোনা-বিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। সেটা কতটা জরুরি?
উত্তর: প্রতিষেধক নিলেও যাবতীয় করোনা-বিধি মেনে চলতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই।
প্রশ্ন: অর্থাৎ...
উত্তর: অর্থাৎ প্রতিষেধক নিলেও প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে ২-৪ সপ্তাহ সময় লাগে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও জোরদার হয় বুস্টার শট নিলে। এখন পরীক্ষিত ভাল মানের প্রতিষেধক কাউকে অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে আটকায় ঠিকই। কিন্তু তার পরেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে নাকের কোনও সংক্রমণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাস্ক পরলে এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে সেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কার পরিমাণ কমে যায়। ফলে মোদ্দা কথাটি হল, প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও কিন্তু মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। হাত ধোয়া, দূরত্ব-বিধি মেনে চলা-সহ অন্যান্য কোভিড-বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার কোনও বিকল্প নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy