প্রতীকী ছবি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যক্ষ্মা রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় না থাকায় তাঁদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। দুই রোগের উপসর্গেরও অসম্ভব মিল। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি— সব কিছুই প্রায় এক রকম। ফলে দু’টির মধ্যে গুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বেশি। রোগী ও চিকিৎসক, উভয়ের সুরক্ষার স্বার্থে তাই যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে কেউ কোভিড-আক্রান্ত কি না, তা দ্রুত পরীক্ষা কাম্য। যক্ষ্মার চিকিৎসায় নিযুক্ত ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
কলকাতার প্রধান দুই যক্ষ্মা হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের অভিযোগ, ‘পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুপমেন্ট’ (পিপিই) এখনও তাঁরা পাননি। অধিকাংশই এখনও পাননি এন-৯৫ মাস্ক। যক্ষ্মা রোগীদের কোভিড পরীক্ষা প্রায় হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কার্যত বিনা নিরাপত্তায় প্রতিদিন শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি নিয়ে আসা অসংখ্য রোগীকে তাঁদের দেখতে হচ্ছে এবং প্রয়োজনে এম আর বাঙুর বা আইডি হাসপাতালে রেফার করতে হচ্ছে। বহির্বিভাগেও অনেক রোগী আসছেন মাস্ক ছাড়া। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে চিকিৎসকদেরও।
দক্ষিণ কলকাতার কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালে যেমন উত্তর-দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর থেকে রেফার হয়ে আসা রোগী ছাড়াও স্থানীয় অনেকে, এমনকি বিভিন্ন নেতানেত্রীর সুপারিশ নিয়ে রোগীরা সরাসরি দেখাতে চলে আসেন। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এঁদের প্রায় কারওরই কোভিড পরীক্ষা করা থাকে না। কাউকে দেখে সন্দেহ হলে কোভিড হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। কিন্তু তার আগে রোগী ও তাঁর সঙ্গীদের সংস্পর্শে আসতেই হচ্ছে। অথচ আমাদের কাছে পিপিই নেই।’’
এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কিছু দিন আগেই এক রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে এক রোগী সরাসরি চলে এলেন। তাঁর যক্ষ্মা ও এইচআইভি ছিল। প্রবল শ্বাসকষ্ট ও জ্বর থাকায় তাঁকে আবার এম আর বাঙুরে পাঠালাম। রোজই এই রকম হচ্ছে। পিপিই ছাড়া, এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া কাজ করছি।’’
সেখানকার আর এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘জেলা থেকে যক্ষ্মা রোগীকে রেফারের আগেই এখন করোনা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। কারণ, উপসর্গ দেখে যক্ষ্মা ও করোনা আলাদা করা মুশকিল। সেটা হচ্ছে না। আমরা তাই পুরনো রোগীদের কোনওমতে দেখছি। নতুন রোগী পেলে পত্রপাঠ ফেরত পাঠাচ্ছি। আমাদেরও তো বাঁচতে হবে।’’
রাজ্যের যক্ষ্মা কর্মসূচির অধিকর্তা বরুণ সাঁতরার কথায়, ‘‘যক্ষ্মার বিষয় আমি দেখি। কিন্তু করোনা নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ দক্ষিণ শহরতলির বোড়ালে কলকাতার নোডাল যক্ষ্মা হাসপাতাল রয়েছে। কলকাতা পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর যৌথ ভাবে সেটি চালায়। সেখানেও চিকিৎসকেরা পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক পাননি বলে অভিযোগ।
কলকাতা পুরসভার যক্ষ্মা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার চন্দ্রশেখর দাসের কথায়, ‘‘আমরা হাসপাতালে ঢোকার মুখে থার্মাল গান দিয়ে জ্বর মাপার ব্যবস্থা রেখেছি। কিন্তু পিপিই এবং মাস্ক আমাদের কিনতে হয় কেন্দ্রের দেওয়া যক্ষ্মা কর্মসূচির টাকায়। কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, শুধু থুতু যাঁরা পরীক্ষা করছেন সেই ল্যাব টেকনিশিয়ানদের এন-৯৫ দিতে হবে। আর পিপিই কেনার কথা এখনও বলেনি। ফলে আমাদের পক্ষে তা কেনা সম্ভব নয়।’’ চিকিৎসকদের ঝুঁকি থাকছে মেনে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কোনও চিকিৎসা কর্মসূচি চিকিৎসকদের কথা ভাবে না। তাঁদের দেখার কথা কর্মসূচি যে চালাচ্ছে সেই সংস্থার। যেমন এ ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা এ ব্যাপারে বলতে পারেন। আমি যক্ষ্মার ওষুধ আর সিবি ন্যাট মেশিন নিয়ে বলতে পারি।’’ পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সৌমিত্র ঘোষ অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।
আরও পড়ুন: কৃষি-মজুরদের দাবি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy